ঢাকা ১২:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তালেপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জলাবদ্ধতা, সেবায় চরম ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ

ছবি সংগৃহিত

ঢাকার কেরানীগঞ্জের তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন যেন রোগীর পরিবর্তে মশা–ব্যাঙের ঠিকানা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতর ও চারপাশে দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুসমান পানি জমে আছে। বৃষ্টির পর এই পানি সপ্তাহের পর সপ্তাহ নিষ্কাশন না হওয়ায় কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে ডেঙ্গু মশার অভয়ারণ্যে।

চিকিৎসাসেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বর্তমানে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব না হওয়ায় রাস্তার পাশেই বসে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি একসময় এলাকার অন্যতম সক্রিয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। এখানে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম, প্রসূতি সেবা, ছোটখাটো অপারেশন, ওষুধ বিতরণসহ নানা চিকিৎসাসেবা হতো।

কিন্তু অবকাঠামোগত দুরবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ঘাটতির কারণে কেন্দ্রটির কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। বর্তমানে ভবনের ভেতরে ও বাইরে জমে থাকা পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আশপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় পানি নামছে না, বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

তালেপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা নিতে এসে আগে যেমন সুবিধা পেতাম, এখন তেমন কিছুই পাই না। চারপাশে পানি, কাদা—বাচ্চা-বুড়ো নিয়ে ভেতরে যাওয়াই কষ্ট।’

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন বা ভবন সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা দাবি, তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই অব্যবস্থাপনা শুধু একটি ভবনের সমস্যা নয়, বরং কেরানীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংসের মুখে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে স্থানীয়দের চিকিৎসাসেবা ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই বড় ঝুঁকিতে পড়বে।

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট অজিত কুমার দাস জানান, ৬ বছর ধরে আবাসন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বাসায় থাকছি। বিল্ডিংয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, নিচেও পানি জমে থাকে। হাসপাতালে ছয় মাসই থাকে পানির নিচে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে থাকতে না পারায় চুরিও হয়ে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। চারোপাশে উঁচুবাড়িঘর হয়ে যাওয়াতে হাসপাতালটি ডোবায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেস জানান, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিচু জায়গায় হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি জমে থাকে, তাই স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানটি পরিদর্শন করে গেছেন। যেহেতু জলাবদ্ধতাই এখানে প্রধান সমস্যা, আশা করি এটা দূর হলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

শুটিংয়ে হঠাৎ অসুস্থ, বাঁচানো গেল না রাজুকে

তালেপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জলাবদ্ধতা, সেবায় চরম ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ

প্রকাশের সময় : ১২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

ঢাকার কেরানীগঞ্জের তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন যেন রোগীর পরিবর্তে মশা–ব্যাঙের ঠিকানা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতর ও চারপাশে দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুসমান পানি জমে আছে। বৃষ্টির পর এই পানি সপ্তাহের পর সপ্তাহ নিষ্কাশন না হওয়ায় কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে ডেঙ্গু মশার অভয়ারণ্যে।

চিকিৎসাসেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বর্তমানে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব না হওয়ায় রাস্তার পাশেই বসে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি একসময় এলাকার অন্যতম সক্রিয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। এখানে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম, প্রসূতি সেবা, ছোটখাটো অপারেশন, ওষুধ বিতরণসহ নানা চিকিৎসাসেবা হতো।

কিন্তু অবকাঠামোগত দুরবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ঘাটতির কারণে কেন্দ্রটির কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। বর্তমানে ভবনের ভেতরে ও বাইরে জমে থাকা পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আশপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় পানি নামছে না, বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

তালেপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা নিতে এসে আগে যেমন সুবিধা পেতাম, এখন তেমন কিছুই পাই না। চারপাশে পানি, কাদা—বাচ্চা-বুড়ো নিয়ে ভেতরে যাওয়াই কষ্ট।’

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন বা ভবন সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা দাবি, তালেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই অব্যবস্থাপনা শুধু একটি ভবনের সমস্যা নয়, বরং কেরানীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংসের মুখে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে স্থানীয়দের চিকিৎসাসেবা ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই বড় ঝুঁকিতে পড়বে।

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট অজিত কুমার দাস জানান, ৬ বছর ধরে আবাসন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বাসায় থাকছি। বিল্ডিংয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, নিচেও পানি জমে থাকে। হাসপাতালে ছয় মাসই থাকে পানির নিচে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে থাকতে না পারায় চুরিও হয়ে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। চারোপাশে উঁচুবাড়িঘর হয়ে যাওয়াতে হাসপাতালটি ডোবায় পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেস জানান, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিচু জায়গায় হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি জমে থাকে, তাই স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানটি পরিদর্শন করে গেছেন। যেহেতু জলাবদ্ধতাই এখানে প্রধান সমস্যা, আশা করি এটা দূর হলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।