
ছবি সংগৃহিত
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় মনিটরিংয়ের অভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে পশু জবাইয়ের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। স্বাস্থ্য সনদ ছাড়াই প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে জবাই করা হচ্ছে যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া থেকে আনা গরু। এতে করে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন মারাত্মক সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারির ঘাটতির কারণে উপজেলাজুড়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ আইনে পশু জবাইয়ের আগে পশু চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন গরু জবাই হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সনদের বালাই নেই। এমনকি অনেক কসাই ও মাংস ব্যবসায়ী নিয়ম সম্পর্কেও অবগত নন।
পৌর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই গরু-ছাগল জবাই হচ্ছে। আমরা সুস্থ নাকি অসুস্থ, পশুর মাংস কিনে খাচ্ছি তা জানি না।
গরুর মাংস ব্যবসায়ী মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পশু হাসপাতাল থেকে লোকজন এসেছিল, সিলও দিয়েছিল। তারপর আর আসে না। ঘুম থেকে উঠতে পারে না, তাই আসে না।’ তিনি জানান, এখন আর দেশি গরু জবাই করা হয় না। কারণ দেশি গরুর গায়ে গোশত থাকে না। যেসব গরু তারা আনেন, সেগুলোর বেশিরভাগই আসে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে।
গলাচিপা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল দাস জানান, ‘আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই, তাই নিয়মিত মনিটরিং সম্ভব হচ্ছে না। কোথায় কোথায় পশু জবাই হয়, সেইসব জায়গার তালিকাও আমাদের কাছে নেই। কিছু অসুস্থ গরু জবাইয়ের খবর পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের অধ্যাপক ড. দীব্যেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স অত্যন্ত সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী রোগ। একবার কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গরু জবাইয়ের আগে ভেটেরিনারি সার্জনের প্রত্যয়ন ছাড়া কোনো পশু জবাই করা উচিত নয়। এটি আইনত দণ্ডনীয় এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে যেসব গরু আনা হয়, সেগুলোর মধ্যে অসুস্থ পশুর আশঙ্কা থাকে বেশি। কারণ সেখানে বাজারে বিক্রি না হওয়া রোগাক্রান্ত গরুগুলো কম দামে দক্ষিণাঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এই এলাকায় ঝুঁকি বেশি।’