
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় নারিকেল গাছে উঠে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে সিফাত (১৪) নামের এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সকালে নারিকেল পাড়তে গাছে ওঠে সিফাত।
শেষ মুহূর্তে হাতে থাকা দা দিয়ে একটি কাঁচা ডাল কাটতে গেলে গাছের পাশ দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের মেইন লাইনের তারের সঙ্গে স্পর্শ লাগে। এতে সঙ্গে সঙ্গে পুরো গাছ বিদ্যুতায়িত হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সে।
খবর পেয়ে কেন্দুয়া থানার পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় মরদেহ গাছ থেকে নামিয়ে আনে। পরিবারের সদস্যরা জানান, সিফাত কিশোরগঞ্জ সদর থানাধীন সিদ্দিকিয়া হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসার হেফজখানার নিয়মিত ছাত্র ছিল।
পড়াশোনার পাশাপাশি সে ভদ্র ও পরিশ্রমী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। গত ১ অক্টোবর বোনের বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য বাড়ি এসেছিল সে। শুক্রবারই ছিল বিয়ের দিন, আর সেদিনই প্রাণ গেল সিফাতের। এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খোলা বৈদ্যুতিক তার ও ঝুলন্ত মেইন লাইন দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির কারণ হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি গাছের ডাল বা ঘরের সাথে লেগে রয়েছে।
কিন্তু তা সংস্কারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা দেশে নতুন নয়। বিদ্যুৎ নিরাপত্তা বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ১৩৫ জন পল্লী বিদ্যুতের কর্মী কাজ করার সময় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
একইসঙ্গে, ২০১৭ সালে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা ৭৫৮ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৩৬৪ জন)-এর মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইন সরানো ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
একইসাথে স্থানীয় মানুষকেও সচেতন হতে হবে—যেকোনো গাছে ওঠা বা কাজ করার আগে তারের অবস্থান খেয়াল করতে হবে। হঠাৎ এই অকাল মৃত্যুর ঘটনায় সরাপাড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনরা বিয়ের আনন্দ ছেড়ে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা বলেন, এক একটি অপমৃত্যু মানেই একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ, এক একটি আর্তনাদ।