ঢাকা ১২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দুয়ায় গবেষক ও লেখক ড. এ. এইচ. এম. কামালকে সংবর্ধনা

  • গজনবী বিপ্লব
  • প্রকাশের সময় : ০২:০৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • ৩৯৫ বার পড়া হয়েছে

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতিমান গবেষক ও লেখক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন ড. এ. এইচ. এম. কামাল-কে এক গৌরবোজ্জ্বল গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে উপজেলার বিদ্যাবল্লভ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে রওশন ইজদানী একাডেমী প্রাঙ্গণে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ড. কামালের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং শিক্ষা-গবেষণায় অবদানের কথা তুলে ধরা হয় এবং তাঁকে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করা হয়। এ বছর তিনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক “টেলিকমিউনিকেশন ও যোগাযোগ খাতে বিশেষ অবদান” শীর্ষক জাতীয় পদকে ভূষিত হন। তার এই অর্জন শুধু কেন্দুয়াবাসীর জন্য নয়, পুরো নেত্রকোনা জেলার জন্যই এক গৌরবের বিষয়। সেই উপলক্ষে স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আমিনুল ইসলাম তালুকদার সবুজ। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও কবি মোহাম্মদ মামুন সিরাজী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংবর্ধিত গুণীজন ড. এ. এইচ. এম. কামাল বলেন, আমার এই অর্জন আপনাদের দোয়া ও ভালবাসার ফসল। এই মাটিতেই আমার শিকড়, এখান থেকেই আমি পথচলা শুরু করেছি। আমার চেষ্টা থাকবে দেশের প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আরও অবদান রাখতে।” তিনি আরও বলেন,আমাদের সন্তানদের শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের কর্মমুখী শিক্ষা, প্রযুক্তি জ্ঞান ও বাস্তব দক্ষতার দিকে এগিয়ে দিতে হবে। সামনের দিনগুলো হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর। যাঁরা এই জগতকে বুঝবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে। তাই পরিবার থেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা শুরু হওয়া জরুরি।” করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। শেষে ড. কামাল আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এলাকাবাসীর ভালোবাসা ও সম্মান আমার কাজের অনুপ্রেরণা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ড. কামালের পিতা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ, রওশন ইজদানী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির, কেন্দুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির আবু সাদেক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তরুণ প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা জামাল তালুকদার, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাদরুল আমিন, জমিলা মেমোরিয়াল বিদ্যা নিকেতনের অধ্যক্ষ লুৎফুর রহমান, সংগঠনের সদস্য কামাল হোসেন তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরুজ আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মার্জিয়া সুলতানা পিংকি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “ড. কামালের মতো একজন গুণী মানুষ আমাদের গ্রামের গর্ব।

তাঁর অবদান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হচ্ছে।” আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি হবে একটি অনুপ্রেরণার উৎস, যা স্থানীয় তরুণদের মননে নতুন স্বপ্ন বপন করেছে বলেও মনে করছেন তারা। কে এই ড. কামাল? ড. এ. এইচ. এম. কামাল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের শিবপুর আউদাটি গ্রামের সন্তান। পিতার নাম আব্দুল কুদ্দুছ মাস্টার, যিনি এলাকায় একজন সম্মানিত প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। একাডেমিক জীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ডক্টর কামাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু একাডেমিক নয়—গবেষণা, সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রকলা—সব ক্ষেত্রেই তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।

তিনি নিজেই লিখেন গান, সুর করেন এবং গেয়ে থাকেন। তাঁর লেখা একাধিক গান সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবসর সময়ে তিনি তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে রঙের ছাপ রেখে যান। তাঁর অর্ধশত গবেষণাধর্মী আর্টিকেল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশিত হয়েছে। দু’টি কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। আছে গল্পের পাণ্ডুলিপি।জাতিয় কবি নজরুল  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ড. কামাল প্রথম ও একমাত্র শিক্ষক যিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত দুজন শিক্ষার্থীকে পিএইচ.ডি অর্জনে সহায়তা করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অনন্য ঘটনা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

শুটিংয়ে হঠাৎ অসুস্থ, বাঁচানো গেল না রাজুকে

কেন্দুয়ায় গবেষক ও লেখক ড. এ. এইচ. এম. কামালকে সংবর্ধনা

প্রকাশের সময় : ০২:০৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতিমান গবেষক ও লেখক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন ড. এ. এইচ. এম. কামাল-কে এক গৌরবোজ্জ্বল গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে উপজেলার বিদ্যাবল্লভ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে রওশন ইজদানী একাডেমী প্রাঙ্গণে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ড. কামালের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং শিক্ষা-গবেষণায় অবদানের কথা তুলে ধরা হয় এবং তাঁকে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করা হয়। এ বছর তিনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক “টেলিকমিউনিকেশন ও যোগাযোগ খাতে বিশেষ অবদান” শীর্ষক জাতীয় পদকে ভূষিত হন। তার এই অর্জন শুধু কেন্দুয়াবাসীর জন্য নয়, পুরো নেত্রকোনা জেলার জন্যই এক গৌরবের বিষয়। সেই উপলক্ষে স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আমিনুল ইসলাম তালুকদার সবুজ। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও কবি মোহাম্মদ মামুন সিরাজী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংবর্ধিত গুণীজন ড. এ. এইচ. এম. কামাল বলেন, আমার এই অর্জন আপনাদের দোয়া ও ভালবাসার ফসল। এই মাটিতেই আমার শিকড়, এখান থেকেই আমি পথচলা শুরু করেছি। আমার চেষ্টা থাকবে দেশের প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আরও অবদান রাখতে।” তিনি আরও বলেন,আমাদের সন্তানদের শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের কর্মমুখী শিক্ষা, প্রযুক্তি জ্ঞান ও বাস্তব দক্ষতার দিকে এগিয়ে দিতে হবে। সামনের দিনগুলো হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর। যাঁরা এই জগতকে বুঝবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে। তাই পরিবার থেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা শুরু হওয়া জরুরি।” করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। শেষে ড. কামাল আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এলাকাবাসীর ভালোবাসা ও সম্মান আমার কাজের অনুপ্রেরণা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ড. কামালের পিতা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ, রওশন ইজদানী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির, কেন্দুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির আবু সাদেক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তরুণ প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা জামাল তালুকদার, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাদরুল আমিন, জমিলা মেমোরিয়াল বিদ্যা নিকেতনের অধ্যক্ষ লুৎফুর রহমান, সংগঠনের সদস্য কামাল হোসেন তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরুজ আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মার্জিয়া সুলতানা পিংকি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “ড. কামালের মতো একজন গুণী মানুষ আমাদের গ্রামের গর্ব।

তাঁর অবদান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হচ্ছে।” আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি হবে একটি অনুপ্রেরণার উৎস, যা স্থানীয় তরুণদের মননে নতুন স্বপ্ন বপন করেছে বলেও মনে করছেন তারা। কে এই ড. কামাল? ড. এ. এইচ. এম. কামাল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের শিবপুর আউদাটি গ্রামের সন্তান। পিতার নাম আব্দুল কুদ্দুছ মাস্টার, যিনি এলাকায় একজন সম্মানিত প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। একাডেমিক জীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ডক্টর কামাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু একাডেমিক নয়—গবেষণা, সাহিত্য, সংগীত ও চিত্রকলা—সব ক্ষেত্রেই তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।

তিনি নিজেই লিখেন গান, সুর করেন এবং গেয়ে থাকেন। তাঁর লেখা একাধিক গান সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবসর সময়ে তিনি তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে রঙের ছাপ রেখে যান। তাঁর অর্ধশত গবেষণাধর্মী আর্টিকেল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশিত হয়েছে। দু’টি কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। আছে গল্পের পাণ্ডুলিপি।জাতিয় কবি নজরুল  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ড. কামাল প্রথম ও একমাত্র শিক্ষক যিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত দুজন শিক্ষার্থীকে পিএইচ.ডি অর্জনে সহায়তা করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অনন্য ঘটনা।