
ছবি সংগৃহিত
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যের একজন নার্গিস আক্তার বলে দাবি করেছেন বোন পরিচয় দেওয়া মৌসুমি। তাঁর দাবি, পায়ে থাকা নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্ত করেছেন তিনি।আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে প্রথম আলোকে এ কথা বলেন মৌসুমি।
গতকাল মঙ্গলবার শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো গতকাল সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
মৌসুমি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন নার্গিস (১৯) মাত্র ১৫ দিন আগে চারতলা ভবনটির তিনতলার কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন। নার্গিস কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করতেন না। কারখানাটির লাইনম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে বোনের লাশ শনাক্ত করেন তিনি।
মৌসুমি বলেন, পায়ে থাকা নূপুর দেখে তিনি তাঁর বোনের লাশ চিনতে পেরেছেন।মৌসুমি জানান, তাঁদের বাবার নাম ওয়াজিউল্লাহ। তিনি ফলের আড়তে কাজ করেন।
মর্গের সামনে জড়ো হওয়া ভুক্তভোগী স্বজনদের একজন ফাতেমা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে মাহিরা আক্তার (১৪) চারতলা ভবনটির তিনতলার কারখানায় কাজ করতেন। মেয়ের লাশ দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন।ফাতেমা বেগম (বাঁয়ে) বলছেন, তাঁর মেয়ের নাম মাহিরা আক্তার। তাঁর লাশ শনাক্ত করতে পেরেছেন তিনি। আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনেছবি: সাজিদ হোসেন
ফাতেমা জানান, তাঁরা মিরপুরের রূপনগরে থাকেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনায়।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সব কটি লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তবে ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা। ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে সব কটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হবে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে স্বজনদের কাছে আপাতত এ ১০টি লাশ হস্তান্তর করা যাবে।
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি। আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গেছবি: সাজিদ হোসেন
শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে টিনশেডের রাসায়নিক গুদাম ও চারতলা ভবনটি অবস্থিত। ভবনটির দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামের একটি কারখানায় টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। আর তিন ও চারতলায় আর এন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা আছে। চারতলার ছাদে টিনশেড দিয়ে বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামের আরও একটি প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটি চারতলা হলেও ছাদে টিনশেড করে আরও একটি তলা করা হয়েছে। এই ভবন ও টিনশেডের রাসায়নিক গুদামে কোনো অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ভবন ও গুদাম কোনোটিরই ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।