ঢাকা ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মর্গের সব জায়গা খুঁজেও জয়-মারজিয়া দম্পতির খোঁজ পেলেন না স্বজনেরা

ছবি সংগৃহিত

এক সপ্তাহ আগে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন জয় মিয়া (২০) ও মারজিয়া সুলতানা (১৮)। সম্পর্কে তাঁরা স্বামী স্ত্রী। মঙ্গলবার শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে দুজনই নিখোঁজ।

শিয়ালবাড়িতে যে দুটি ভবনে আগুন লাগে সেখানকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পোশাক কারখানায় স্বামী–স্ত্রী কাজ করতেন। জয় মিয়া কাজ করতেন অপারেটর হিসেবে। আর স্ত্রী মারজিয়া সুলতানা ছিলেন হেলপার (সহযোগী)।

অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মারজিয়ার বাবা মো. সুলতান। অনেক সময় ধরে মেয়েকে খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান পাননি। না পেয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আসেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর মরদেহ শনাক্ত করতে মর্গে প্রবেশ করেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

মারজিয়ার বাবা ও জয় মিয়ার বাবা সবুজ মিয়াও সন্তানদের মরদেহ শনাক্ত করতে মর্গে প্রবেশ করেন। তাঁরা সেখানে থাকা ১৮টি মরদেহ দেখেন। কিন্তু সন্তানদের কোনো মরদেহ সেখানে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা।

এরপর মারজিয়া ও জয়ের ছবি হাতে মর্গ থেকে বেরিয়ে আহাজারি করেন সুলতান। তিনি বলেন, মর্গের সব জায়গা খুঁজেও মেয়ে ও জামাইকে পাওয়া যায়নি। কোনো মরদেহকেই তাদের মতো মনে হয়নি। অনেকগুলো আবার পুড়ে গেছে, চেনা যায় না।

এখন কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মারজিয়ার বাবা প্রথম আলোকে জানান, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখবেন খোঁজ পান কি না। এর আগে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়েও দেখেছেন, কিন্তু সেখানে পাননি।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে ১৬টি মরদেহ আনা হয়েছে। ঢাকা, ১৪ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

জয় মিয়ার বাবাও মর্গে ঘুরে ঘুরে সবগুলো পোড়া মরদেহ দেখেছেন। কোনোটিকে নিজের ছেলের মতো মনে হয়নি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব পুড়ে গেছে। চেনা যাচ্ছে না। মনে হয় না ছেলেটা এখানে আছে।

সবুজ মিয়া জানান, জয় তাঁর ছোট ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা থানায়। ছেলে ও ছেলের স্ত্রী একসঙ্গে চাকরি নেয়। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাদের আর খোঁজ নেই।মর্গের সামনে ছবি হাতে অপেক্ষারত স্বজনেরা। ঢাকা, ১৪ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে গাজীপুর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সবুজ মিয়া। সেখানে কোনো খোঁজ না পেয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেলে।

রাত সাড়ে ৮টায় চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকল কলেজে মর্গে ১৬টি মরদেহ আনা হয়। যার মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৭ জন নারী। মরদেহগুলোর বেশির ভাগই পুরোপুরি পুড়ে গেছে।রাত সাড়ে ১১টার দিকে অপেক্ষমাণ স্বজনদের মরদেহ শনাক্তের জন্য মর্গে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।

সেখানে কয়েকজন প্রাথমিক আলামত দেখে স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করেন। এর মধ্যে নারগিস বেগমের (১৮) মরদেহ শনাক্ত করেন তাঁর বড় বোন লাইজু বেগম। তিনি বোরকা দেখে বোনের লাশ শনাক্ত করেছেন বলে জানান।নূর আলম সরকার নামের একজনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর সহকর্মী সাচ্চু মোল্লা।

বোরকা আর মাথার ব্যান্ড দেখে মাহিরা (১৪) নামের এক কিশোরীর মরদেহ শনাক্ত করেন তার বড় বোন সানজিদা।মুন্নি আখতার (১৬)–এর লাশ শনাক্ত করেন তার বড় বোন শম্পা আক্তার। ফারজানা আক্তারের (১৫) মরদেহ শনাক্ত করেন তার চাচা জামাল মিয়া।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্যসচিব সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পর বুধবার স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

পায়ের নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্ত

মর্গের সব জায়গা খুঁজেও জয়-মারজিয়া দম্পতির খোঁজ পেলেন না স্বজনেরা

প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

এক সপ্তাহ আগে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন জয় মিয়া (২০) ও মারজিয়া সুলতানা (১৮)। সম্পর্কে তাঁরা স্বামী স্ত্রী। মঙ্গলবার শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে দুজনই নিখোঁজ।

শিয়ালবাড়িতে যে দুটি ভবনে আগুন লাগে সেখানকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পোশাক কারখানায় স্বামী–স্ত্রী কাজ করতেন। জয় মিয়া কাজ করতেন অপারেটর হিসেবে। আর স্ত্রী মারজিয়া সুলতানা ছিলেন হেলপার (সহযোগী)।

অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মারজিয়ার বাবা মো. সুলতান। অনেক সময় ধরে মেয়েকে খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান পাননি। না পেয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আসেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর মরদেহ শনাক্ত করতে মর্গে প্রবেশ করেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

মারজিয়ার বাবা ও জয় মিয়ার বাবা সবুজ মিয়াও সন্তানদের মরদেহ শনাক্ত করতে মর্গে প্রবেশ করেন। তাঁরা সেখানে থাকা ১৮টি মরদেহ দেখেন। কিন্তু সন্তানদের কোনো মরদেহ সেখানে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা।

এরপর মারজিয়া ও জয়ের ছবি হাতে মর্গ থেকে বেরিয়ে আহাজারি করেন সুলতান। তিনি বলেন, মর্গের সব জায়গা খুঁজেও মেয়ে ও জামাইকে পাওয়া যায়নি। কোনো মরদেহকেই তাদের মতো মনে হয়নি। অনেকগুলো আবার পুড়ে গেছে, চেনা যায় না।

এখন কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মারজিয়ার বাবা প্রথম আলোকে জানান, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখবেন খোঁজ পান কি না। এর আগে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়েও দেখেছেন, কিন্তু সেখানে পাননি।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে ১৬টি মরদেহ আনা হয়েছে। ঢাকা, ১৪ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

জয় মিয়ার বাবাও মর্গে ঘুরে ঘুরে সবগুলো পোড়া মরদেহ দেখেছেন। কোনোটিকে নিজের ছেলের মতো মনে হয়নি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব পুড়ে গেছে। চেনা যাচ্ছে না। মনে হয় না ছেলেটা এখানে আছে।

সবুজ মিয়া জানান, জয় তাঁর ছোট ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা থানায়। ছেলে ও ছেলের স্ত্রী একসঙ্গে চাকরি নেয়। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাদের আর খোঁজ নেই।মর্গের সামনে ছবি হাতে অপেক্ষারত স্বজনেরা। ঢাকা, ১৪ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে গাজীপুর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সবুজ মিয়া। সেখানে কোনো খোঁজ না পেয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেলে।

রাত সাড়ে ৮টায় চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকল কলেজে মর্গে ১৬টি মরদেহ আনা হয়। যার মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৭ জন নারী। মরদেহগুলোর বেশির ভাগই পুরোপুরি পুড়ে গেছে।রাত সাড়ে ১১টার দিকে অপেক্ষমাণ স্বজনদের মরদেহ শনাক্তের জন্য মর্গে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।

সেখানে কয়েকজন প্রাথমিক আলামত দেখে স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করেন। এর মধ্যে নারগিস বেগমের (১৮) মরদেহ শনাক্ত করেন তাঁর বড় বোন লাইজু বেগম। তিনি বোরকা দেখে বোনের লাশ শনাক্ত করেছেন বলে জানান।নূর আলম সরকার নামের একজনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর সহকর্মী সাচ্চু মোল্লা।

বোরকা আর মাথার ব্যান্ড দেখে মাহিরা (১৪) নামের এক কিশোরীর মরদেহ শনাক্ত করেন তার বড় বোন সানজিদা।মুন্নি আখতার (১৬)–এর লাশ শনাক্ত করেন তার বড় বোন শম্পা আক্তার। ফারজানা আক্তারের (১৫) মরদেহ শনাক্ত করেন তার চাচা জামাল মিয়া।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্যসচিব সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পর বুধবার স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।