ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন যেনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক গৌরবগাথা,মাঠপ্রেমী মানুষের বিজয়

বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন যেনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক গৌরবগাথা
হাইকোর্টের ঐতিহাসিক আদেশ, দমন-পীড়ন পেরিয়ে মাঠপ্রেমী মানুষের বিজয়
১৪ আগস্ট—বলাইশিমুলের ইতিহাসে এক অমর দিন। ২০২২ সালের এই দিনে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক আদেশে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠে সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এটি কেবল একটি মাঠ রক্ষা নয়—এটি ছিল একটি জনপদের অস্তিত্ব রক্ষা, ক্ষমতার অহংকারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বিজয়।
হাইকোর্টের আদেশের পরদিন, ১৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। এমনকি গরু জবাইয়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—তার মাত্র একদিন আগে, ১৩ আগস্ট গভীর রাতে, পরিকল্পিতভাবে প্রজেক্টে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তখন মাঠ পাহারা দিচ্ছিল প্রায় অর্ধ শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ ও আনসার সদস্য। তাদের চোখের সামনে কারা আগুন দিল—এই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।
অগ্নিকাণ্ডের পর শুরু হয় দমন অভিযান। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালায়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন—
“প্রয়োজনে পুরো বলাইশিমুল ইউনিয়নকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসব।”
সাংবাদিক হুমায়ূন কবির এই সংবাদ প্রকাশ করায় হুমকির শিকার হন। আমি নিজে—বলাইশিমুলবাসীর পক্ষে কথা বলার কারণে—এই মামলায় ৪ নম্বর আসামি হয়েছিলাম। মোট তিনটি মামলায় ৮৬ জনকে আসামি করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের পরদিনই হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জনপদটিকে রক্ষা করে। এটি ছিল তৎকালীন এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী ‘অধ্যাপিকা’ অপু উকিলের নেতৃত্বে কেন্দুয়া-আটপাড়ায় চলমান লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে তীব্র এক বিদ্রোহ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি সহায়তা দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। শুধু বলাইশিমুল নয়—কেন্দুয়া তথা দেশের নানা প্রান্তের মানুষ মাঠরক্ষা আন্দোলনের পক্ষে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন।
বলাইশিমুলবাসী এক সামাজিক দরবারে ইউএনও মাহমুদা বেগমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং মাঠবিরোধী নেতাদের একঘরে করেন। এটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
আজকের এই দিনে আমরা স্মরণ করি সেই সাহসী মানুষদের, যারা ভয়, মামলা, হামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে মাঠ রক্ষার জন্য লড়ে গেছেন। বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন প্রমাণ করেছে—
যখন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন অন্যায়, ক্ষমতার অহংকার ও লুটপাট—কোনোটাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

পায়ের নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্ত

বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন যেনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক গৌরবগাথা,মাঠপ্রেমী মানুষের বিজয়

প্রকাশের সময় : ১০:২৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন যেনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক গৌরবগাথা
হাইকোর্টের ঐতিহাসিক আদেশ, দমন-পীড়ন পেরিয়ে মাঠপ্রেমী মানুষের বিজয়
১৪ আগস্ট—বলাইশিমুলের ইতিহাসে এক অমর দিন। ২০২২ সালের এই দিনে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক আদেশে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠে সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এটি কেবল একটি মাঠ রক্ষা নয়—এটি ছিল একটি জনপদের অস্তিত্ব রক্ষা, ক্ষমতার অহংকারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বিজয়।
হাইকোর্টের আদেশের পরদিন, ১৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। এমনকি গরু জবাইয়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—তার মাত্র একদিন আগে, ১৩ আগস্ট গভীর রাতে, পরিকল্পিতভাবে প্রজেক্টে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তখন মাঠ পাহারা দিচ্ছিল প্রায় অর্ধ শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ ও আনসার সদস্য। তাদের চোখের সামনে কারা আগুন দিল—এই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।
অগ্নিকাণ্ডের পর শুরু হয় দমন অভিযান। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালায়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন—
“প্রয়োজনে পুরো বলাইশিমুল ইউনিয়নকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসব।”
সাংবাদিক হুমায়ূন কবির এই সংবাদ প্রকাশ করায় হুমকির শিকার হন। আমি নিজে—বলাইশিমুলবাসীর পক্ষে কথা বলার কারণে—এই মামলায় ৪ নম্বর আসামি হয়েছিলাম। মোট তিনটি মামলায় ৮৬ জনকে আসামি করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের পরদিনই হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জনপদটিকে রক্ষা করে। এটি ছিল তৎকালীন এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী ‘অধ্যাপিকা’ অপু উকিলের নেতৃত্বে কেন্দুয়া-আটপাড়ায় চলমান লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে তীব্র এক বিদ্রোহ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি সহায়তা দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। শুধু বলাইশিমুল নয়—কেন্দুয়া তথা দেশের নানা প্রান্তের মানুষ মাঠরক্ষা আন্দোলনের পক্ষে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন।
বলাইশিমুলবাসী এক সামাজিক দরবারে ইউএনও মাহমুদা বেগমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং মাঠবিরোধী নেতাদের একঘরে করেন। এটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
আজকের এই দিনে আমরা স্মরণ করি সেই সাহসী মানুষদের, যারা ভয়, মামলা, হামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে মাঠ রক্ষার জন্য লড়ে গেছেন। বলাইশিমুল মাঠরক্ষা আন্দোলন প্রমাণ করেছে—
যখন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন অন্যায়, ক্ষমতার অহংকার ও লুটপাট—কোনোটাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না।