ঢাকা ১১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
হাসপাতাল সারাদেশ চাকরি

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১১ মাসধরে বেতন নেই, হঠাৎ জানাগেল ৫৩ জনের চাকরি নেই

  • ফেনি প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ১২:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

আমার এক ছেলে মাদরাসায় পড়ে। ১১ মাস বেতন নেই, ছেলের মাদরাসার খরচও দিতে পারছি না। যে হাতে ভাত খাই, সেই হাত দিয়েই মানুষের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করি। তবুও আমাদের ভাগ্যে এত দুর্দশা। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এতদিন পর এসে এখন শুনছি চাকরিই নেই। এই বয়সে এসে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করব সেই সুযোগও নেই। এ খবরে আমরা সকলে দিশেহারা হয়ে গেছি। এভাবে হতাশার কথা বলছিলেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত বিবি কুলসুম নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বিবি কুলসুমের মতো এমন একই গল্প হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা আরও ৫৩ জনের।

জেনারেল হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন ৫৩ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন। ইতোপূর্বে সরকার থেকে তাদের জন্য ২১ হাজার ৫৫০ টাকা বেতন বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেতন দিয়েছেন ৮ হাজার টাকা। তাও ছিল অনিয়মিত। পরবর্তীতে হাসপাতালের চাহিদা পূরণের জন্য আরও ২৯ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও এদের কাউকেই বেতন-ভাতা দেয়নি ঠিকাদার। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ১০/২০ টাকা করে নিয়ে কোনোরকমে দিনযাপন করছিলেন তারা। সবশেষ সোমবার (২ জুন) তাদের বকেয়া বেতন ও চাকরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা ও চাকরি না থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ঝর্ণা রক্ষিত বলেন, ‘২০০২ সালে মাত্র আড়াই হাজার টাকা বেতনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেছিলাম। ২৩ বছর কাজ করে গেলেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের নামে অনেক বেশি বেতন তুললেও প্রকৃতপক্ষে পেয়েছি সামান্য কিছু। সর্বশেষ ১১ মাস বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এতদিন পর এসে এখন শুনছি চাকরিই নেই। এমন ঘটনায় রীতিমতো ভেঙে পড়েছি।’

ইলিয়াস নামে এক আউটসোর্সিং কর্মচারী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম আমাদের বেতন দিতেন ৩ হাজার ২০০ টাকা। পরে আমরা আন্দোলন করলে তিনি ৬ হাজার টাকা বেতন দেন। তারপর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর অন্যতম ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত শরীফ উল্যাহ এসে বেতন ৮ হাজার টাকা করলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এত কিছুর মধ্যেও মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু এখন নাকি আমাদের চাকরিই নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের বিষয়ে কোনো বরাদ্দ নেই। মন্ত্রণালয় থেকেও তাদের না নেওয়ার বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। বরাদ্দ না পেলে তো বেতন দেওয়া সম্ভব না।

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের শৃঙ্খলায় প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারা থাকলে থাকতে পারেন, অথবা চলে যেতে পারেন-কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে এমনটিই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আমাদের অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

হাসপাতাল সারাদেশ চাকরি

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১১ মাসধরে বেতন নেই, হঠাৎ জানাগেল ৫৩ জনের চাকরি নেই

প্রকাশের সময় : ১২:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ছবি সংগৃহীত

আমার এক ছেলে মাদরাসায় পড়ে। ১১ মাস বেতন নেই, ছেলের মাদরাসার খরচও দিতে পারছি না। যে হাতে ভাত খাই, সেই হাত দিয়েই মানুষের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করি। তবুও আমাদের ভাগ্যে এত দুর্দশা। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এতদিন পর এসে এখন শুনছি চাকরিই নেই। এই বয়সে এসে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করব সেই সুযোগও নেই। এ খবরে আমরা সকলে দিশেহারা হয়ে গেছি। এভাবে হতাশার কথা বলছিলেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত বিবি কুলসুম নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বিবি কুলসুমের মতো এমন একই গল্প হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা আরও ৫৩ জনের।

জেনারেল হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন ৫৩ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন। ইতোপূর্বে সরকার থেকে তাদের জন্য ২১ হাজার ৫৫০ টাকা বেতন বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেতন দিয়েছেন ৮ হাজার টাকা। তাও ছিল অনিয়মিত। পরবর্তীতে হাসপাতালের চাহিদা পূরণের জন্য আরও ২৯ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও এদের কাউকেই বেতন-ভাতা দেয়নি ঠিকাদার। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ১০/২০ টাকা করে নিয়ে কোনোরকমে দিনযাপন করছিলেন তারা। সবশেষ সোমবার (২ জুন) তাদের বকেয়া বেতন ও চাকরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা ও চাকরি না থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ঝর্ণা রক্ষিত বলেন, ‘২০০২ সালে মাত্র আড়াই হাজার টাকা বেতনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেছিলাম। ২৩ বছর কাজ করে গেলেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের নামে অনেক বেশি বেতন তুললেও প্রকৃতপক্ষে পেয়েছি সামান্য কিছু। সর্বশেষ ১১ মাস বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এতদিন পর এসে এখন শুনছি চাকরিই নেই। এমন ঘটনায় রীতিমতো ভেঙে পড়েছি।’

ইলিয়াস নামে এক আউটসোর্সিং কর্মচারী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম আমাদের বেতন দিতেন ৩ হাজার ২০০ টাকা। পরে আমরা আন্দোলন করলে তিনি ৬ হাজার টাকা বেতন দেন। তারপর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর অন্যতম ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত শরীফ উল্যাহ এসে বেতন ৮ হাজার টাকা করলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এত কিছুর মধ্যেও মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু এখন নাকি আমাদের চাকরিই নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের বিষয়ে কোনো বরাদ্দ নেই। মন্ত্রণালয় থেকেও তাদের না নেওয়ার বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। বরাদ্দ না পেলে তো বেতন দেওয়া সম্ভব না।

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের শৃঙ্খলায় প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারা থাকলে থাকতে পারেন, অথবা চলে যেতে পারেন-কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে এমনটিই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আমাদের অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।