ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’ উন্মোচন হলো বুয়েটের শেরে বাংলা হলে

ছবি সংগৃহিত

আবরার ফাহাদ স্মরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল চত্বরে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’ স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ স্মৃতিফলক উদ্বোধন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন। বুয়েটের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (তথ্য) মো. শফিউর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান আবরার ফাহাদের পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করতে হবে, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার সামান্যতম পুনরাবৃত্তিও যেন আর কখনো না ঘটে। এটি শুধু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয়, শিক্ষার্থী সমাজের পক্ষ থেকেও প্রতিজ্ঞা। একই সঙ্গে দেশের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও প্রতিজ্ঞা করবেন—আর কোনো শিক্ষার্থী যেন প্রতিবাদের কারণে মৃত্যুর মুখে পতিত না হয়।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আবরার ফাহাদ সাহসিকতার সঙ্গে সত্য কথা বলেছিল। নির্ভীকভাবে পানিচুক্তি নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছিল বলেই তাকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। আজ যে স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হয়েছে, সেটি কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, প্রতিবাদের স্বরূপ ধারণ করা এবং দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত রাখার অঙ্গীকার। দেশের মঙ্গল সাধনের জন্য ভয় পাওয়া যাবে না, আবরার তার জীবন দিয়ে আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছে। তাই আজ আমাদেরও শপথ নিতে হবে দেশপ্রেম, সত্য প্রকাশ ও ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল থাকার।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘বুয়েটে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা নিষিদ্ধই থাকবে। যেকোনো ব্যানারে এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হলে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আমি প্রত্যাশা করি, তোমরা সবাই সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, যেন কোনোভাবে এ ধরনের রাজনীতি বুয়েটে প্রবেশ করতে না পারে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শেরেবাংলা হলের অ্যালামনাই ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রকৌশলী আবুল হায়াত, শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোররাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) কয়েকজন নেতা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। মঙ্গলবার ছিল সেই নৃশংস ঘটনার ষষ্ঠ বার্ষিকী।

আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বাদ আসর বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’ উন্মোচন হলো বুয়েটের শেরে বাংলা হলে

প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

আবরার ফাহাদ স্মরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল চত্বরে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতিফলক’ স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ স্মৃতিফলক উদ্বোধন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন। বুয়েটের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (তথ্য) মো. শফিউর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান আবরার ফাহাদের পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করতে হবে, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার সামান্যতম পুনরাবৃত্তিও যেন আর কখনো না ঘটে। এটি শুধু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয়, শিক্ষার্থী সমাজের পক্ষ থেকেও প্রতিজ্ঞা। একই সঙ্গে দেশের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও প্রতিজ্ঞা করবেন—আর কোনো শিক্ষার্থী যেন প্রতিবাদের কারণে মৃত্যুর মুখে পতিত না হয়।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আবরার ফাহাদ সাহসিকতার সঙ্গে সত্য কথা বলেছিল। নির্ভীকভাবে পানিচুক্তি নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছিল বলেই তাকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। আজ যে স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হয়েছে, সেটি কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, প্রতিবাদের স্বরূপ ধারণ করা এবং দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত রাখার অঙ্গীকার। দেশের মঙ্গল সাধনের জন্য ভয় পাওয়া যাবে না, আবরার তার জীবন দিয়ে আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছে। তাই আজ আমাদেরও শপথ নিতে হবে দেশপ্রেম, সত্য প্রকাশ ও ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল থাকার।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘বুয়েটে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা নিষিদ্ধই থাকবে। যেকোনো ব্যানারে এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হলে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আমি প্রত্যাশা করি, তোমরা সবাই সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, যেন কোনোভাবে এ ধরনের রাজনীতি বুয়েটে প্রবেশ করতে না পারে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শেরেবাংলা হলের অ্যালামনাই ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রকৌশলী আবুল হায়াত, শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোররাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) কয়েকজন নেতা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন। মঙ্গলবার ছিল সেই নৃশংস ঘটনার ষষ্ঠ বার্ষিকী।

আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বাদ আসর বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।