
: নেত্রকোনা জেলার বৃহৎ উপজেলা কেন্দুয়ার পাইকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত পেমই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি একাধারে একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, অপরদিকে নান্দনিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এক সেবাকেন্দ্র।
১৯৯০ সালে স্থাপিত এই কেন্দ্রটি কেন্দুয়ার রিমোট ও সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়ন—পাইকুড়া, মোজাফফরপুর, চিরাং এবং রোয়াইলবাড়ির মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮.৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই তদন্ত কেন্দ্র ঘিরে রয়েছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পুকুরঘাট, সবুজ গাছপালা, শানবাঁধানো ঘাট ও নির্মল বাতাস মিলিয়ে এটি যেন এক নিরাপত্তা-আবহে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোল ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্র। তদন্ত কেন্দ্রটিতে রয়েছে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক হাজতখানা, মালখানা কক্ষ, অস্ত্রাগার, জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, একটি মনোরম মসজিদ, অজুখানা এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।
একসময় এটি ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এটি তদন্ত কেন্দ্র হিসেবে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে জনসাধারণের মতে, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও যথাযথ সড়ক যোগাযোগের অভাবে মোজাফফরপুর, রোয়াইলবাড়ি ও চিরাং ইউনিয়নের অনেক মানুষ সরাসরি কেন্দুয়া সদরেই যেতে বাধ্য হন। অনেকে মনে করেন, যদি এই তদন্ত কেন্দ্রটি চিরাং বাজার এলাকায় স্থাপন হতো, তাহলে চারটি ইউনিয়নের মানুষ আরও উপকৃত হতেন। বর্তমানে কেন্দ্রটির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জল হোসেন, যিনি ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের সময় চারপাশে ছিল ঘন ঝোপঝাড়। এখন অনেকটাই পরিষ্কার।
এলাকার মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি আসে। মাদক, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু এসব ইতিবাচক দিকগুলো তেমনভাবে আলোচনায় আসে না।” তিনি আরও জানান, এই তদন্ত কেন্দ্রে জনবল ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজন ৪ জন এসআই ও ৪ জন এএসআই হলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ২ জন এসআই ও ২ জন এএসআই। কনস্টেবল রয়েছেন ১২ জন এবং গাড়িচালক ২ জন। যানবাহন হিসেবে মাত্র একটি পিকআপ রয়েছে। তবে রয়েছে মোটরসাইকেল সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্রে নেই কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী কিংবা কম্পিউটার অপারেটর।
এমনকি মূল ফটকে নেই নামফলক পর্যন্ত। ফলে সেবা নিতে আসা মানুষকে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। ইন্সপেক্টর তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত। জনগণের সহযোগিতা পেলে আমরা আরও ভালো করতে পারব।”
স্থানীয় জনগণ মনে করেন, এই তদন্ত কেন্দ্রটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত জনবল, সরঞ্জাম ও অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে এটি শুধুমাত্র একটি নিরাপত্তা কেন্দ্র নয়, বরং জনবান্ধব সেবার এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। পেমই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিবেশ যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি এখানকার সদস্যদের আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতাও এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।