ঢাকা ০৪:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ময়মনসিংহ জয়নুল উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন

ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে সেখানে ‘কিডস জোন’ করার কথা জানান কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশে শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারা গ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

ইজারা গ্রহীতা মো. সেলিম মিয়া নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক। আর মাহবুবুর রহমান গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

সেলিম মিয়ার নামে লিজ নেওয়া হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাহবুবুর রহমান। ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।

এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে। ওই দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

একই সঙ্গে নিয়মিত মাসিক ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই অবস্থায় ইজারা বাতিল করে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন।

আজ দুপুরে দিকে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামসহ তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও বন বিভাগের লোকজন এতে অংশ নেন। পাশাপাশি জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়।

এর আগে মিনি চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীগুলো নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় বন বিভাগ। জানতে চাইলে বন বিভাগের ময়মনসিংহে রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রিদুয়ানুল হক বলেন, ‘চিড়িয়াখানাটি ছিল অবৈধ। জেলা প্রশাসন এটি উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠায় এখানে থাকা বন্য প্রাণীগুলো সরিয়ে নিতে।

আমরা পাঁচটি হরিণ, দুটি ময়ূর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু পাখি, দুটি ইমু পাখি জব্দ করেছি। বন্য প্রাণী‍গুলো সরিয়ে নিয়ে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।’

সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নগরীতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে শিশুরা পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর সময় কাটাতে পারত।

‘যা-ই হোক সেটি অবৈধভাবে পরিচালিত হওয়ায় ভাঙা হয়েছে। আমরা চাই, অচিরেই যেন সিটি করপোরেশন শিশুদের বিনোদনের আরেকটি ক্ষেত্র তৈরি করে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

রংপুরে কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ২র‌্যাব

ময়মনসিংহ জয়নুল উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে সেখানে ‘কিডস জোন’ করার কথা জানান কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশে শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারা গ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

ইজারা গ্রহীতা মো. সেলিম মিয়া নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক। আর মাহবুবুর রহমান গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

সেলিম মিয়ার নামে লিজ নেওয়া হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাহবুবুর রহমান। ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।

এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে। ওই দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

একই সঙ্গে নিয়মিত মাসিক ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই অবস্থায় ইজারা বাতিল করে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন।

আজ দুপুরে দিকে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামসহ তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও বন বিভাগের লোকজন এতে অংশ নেন। পাশাপাশি জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়।

এর আগে মিনি চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীগুলো নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় বন বিভাগ। জানতে চাইলে বন বিভাগের ময়মনসিংহে রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রিদুয়ানুল হক বলেন, ‘চিড়িয়াখানাটি ছিল অবৈধ। জেলা প্রশাসন এটি উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠায় এখানে থাকা বন্য প্রাণীগুলো সরিয়ে নিতে।

আমরা পাঁচটি হরিণ, দুটি ময়ূর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু পাখি, দুটি ইমু পাখি জব্দ করেছি। বন্য প্রাণী‍গুলো সরিয়ে নিয়ে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।’

সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নগরীতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে শিশুরা পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর সময় কাটাতে পারত।

‘যা-ই হোক সেটি অবৈধভাবে পরিচালিত হওয়ায় ভাঙা হয়েছে। আমরা চাই, অচিরেই যেন সিটি করপোরেশন শিশুদের বিনোদনের আরেকটি ক্ষেত্র তৈরি করে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।