ঢাকা ০৮:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বারহাট্টায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, অধিদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু

ছবি- শিক্ষক এরশাদ মিয়া

 নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল ও অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আজ সোমবার নেত্রকোনা জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা শহিদুল আজম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

অভিযুক্ত সহাকারী শিক্ষক এরশাদ মিয়া উপজেলার সফর বাংলা গ্রামের বাসিন্দা।  বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে। ওই সময়ে আওয়ামী নেতাদের সাথে নির্বাচনী মঞ্চে তাকে একাধিকবার দেখা গেছে। এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

পরে তদন্ত শুরু হলেও আওয়ামী নেতাদের দিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সফরবাংলা গ্রামের  আশিফউর রহমান নামে এক ব্যক্তি চলতি বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।  অভিযোগে বলা হয়, এরশাদ মিয়া শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র গড়ে তুলেছেন।

তার বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি গ্রাম্য কলহ উসকে দেওয়া, গ্রামে সুদে টাকা লাগানো, অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে ভোগদখল করা এবং নিয়মিত জুয়ার আসর বসান তিনি। অভিযোগকারীর দাবি, এসব কার্যকলাপের ফলে এলাকায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষ করে একজন সরকারি শিক্ষক হিসেবে এমন ভূমিকা শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত করছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ জানান আশিফউর রহমান।  অভিযোগটি আমলে নিয়ে  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। পাশাপাশি গৃহীত ব্যবস্থা অধিদপ্তরকে অবহিত করতে বলা হয়।

  গত ২২ মে  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন)  মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।  পরে অভিযোগ তদন্তে কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে গতকাল রোববার তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগকারী আশিফউর রহমান বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও এরশাদ মিয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন।

এসব আপনারা সবাই জানেন, সংবাদও প্রকাশ করেছেন। এখন পট পরিবর্তন হওয়ার পর তিনি বিএনপি পন্থী সেজে এলাকায় জুয়ার আসর পরিচালনা করেন, সরকারি জমি দখলসহ লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে সমাজে বিশৃঙ্খলা করছেন। আমাদের জমি জমাও দখল করে নিয়েছেন। তার ছেলে আবার নাকি সমন্বয়ক, সেই ক্ষমতায় আরও বেপরোয়াভাবে যা খুশি করে যাচ্ছেন।

এরশাদের ছেলে কয়েকদিন আমার বৃদ্ধ বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে গিয়েছে।  তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এরশাদ মিয়া বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে মিথ্যা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী আমার চাচাতো ভাই হয়। অভিযোগের কোনটাই সত্যি নয়।  জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা শহিদুল আজম বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত শেষ হয়েছে।  তদন্ত রিপোর্টও হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

বারহাট্টায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, অধিদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু

প্রকাশের সময় : ০১:৫৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

ছবি- শিক্ষক এরশাদ মিয়া

 নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল ও অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আজ সোমবার নেত্রকোনা জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা শহিদুল আজম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

অভিযুক্ত সহাকারী শিক্ষক এরশাদ মিয়া উপজেলার সফর বাংলা গ্রামের বাসিন্দা।  বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে। ওই সময়ে আওয়ামী নেতাদের সাথে নির্বাচনী মঞ্চে তাকে একাধিকবার দেখা গেছে। এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

পরে তদন্ত শুরু হলেও আওয়ামী নেতাদের দিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সফরবাংলা গ্রামের  আশিফউর রহমান নামে এক ব্যক্তি চলতি বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষক এরশাদ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।  অভিযোগে বলা হয়, এরশাদ মিয়া শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র গড়ে তুলেছেন।

তার বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি গ্রাম্য কলহ উসকে দেওয়া, গ্রামে সুদে টাকা লাগানো, অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে ভোগদখল করা এবং নিয়মিত জুয়ার আসর বসান তিনি। অভিযোগকারীর দাবি, এসব কার্যকলাপের ফলে এলাকায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষ করে একজন সরকারি শিক্ষক হিসেবে এমন ভূমিকা শিক্ষাব্যবস্থাকে কলুষিত করছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ জানান আশিফউর রহমান।  অভিযোগটি আমলে নিয়ে  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। পাশাপাশি গৃহীত ব্যবস্থা অধিদপ্তরকে অবহিত করতে বলা হয়।

  গত ২২ মে  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন)  মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।  পরে অভিযোগ তদন্তে কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে গতকাল রোববার তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগকারী আশিফউর রহমান বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও এরশাদ মিয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন।

এসব আপনারা সবাই জানেন, সংবাদও প্রকাশ করেছেন। এখন পট পরিবর্তন হওয়ার পর তিনি বিএনপি পন্থী সেজে এলাকায় জুয়ার আসর পরিচালনা করেন, সরকারি জমি দখলসহ লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে সমাজে বিশৃঙ্খলা করছেন। আমাদের জমি জমাও দখল করে নিয়েছেন। তার ছেলে আবার নাকি সমন্বয়ক, সেই ক্ষমতায় আরও বেপরোয়াভাবে যা খুশি করে যাচ্ছেন।

এরশাদের ছেলে কয়েকদিন আমার বৃদ্ধ বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে গিয়েছে।  তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এরশাদ মিয়া বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে মিথ্যা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী আমার চাচাতো ভাই হয়। অভিযোগের কোনটাই সত্যি নয়।  জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা শহিদুল আজম বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত শেষ হয়েছে।  তদন্ত রিপোর্টও হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।