ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ময়মনসিংহে ৭ জেলার বিচারকদের মতবিনিময় সভা

 স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে ময়মনসিংহে ৭ জেলার বিচারকেরা মতবিনিময় সভা করেছেন।

শনিবার সকালে নগরীর একটি রিসোর্টে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এর ‘জুলাই বিপ্লবের অঙ্গীকার ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল খুলনার বিচারক মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শেরপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জহিরুল কবির, নেত্রকোনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হাফিজুর রহমান, জামালপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরুল আমীন বিপ্লব এবং গাজীপুরের মহানগর দায়রা জজ শাহরিয়ার কবির উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাতটি জেলার প্রায় দেড়শ বিচারক অংশ নেন।

সভার শুরুতে বিচারকবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধার সাথে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। বক্তারা তাঁদের আত্মত্যাগকে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। সভায় বক্তারা বলেন, এই আত্মত্যাগ শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় লড়াইয়ের অংশ।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও স্বাধীনতা অপরিহার্য হলেও, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখনো নির্বাহী বিভাগের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বিচারকদের পদ বৃদ্ধি, পদ-সৃজন এবং আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকায় বিচারিক কর্মঘণ্টার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দিচ্ছে। সভায় উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি উঠে আসে।

সভায় অংশ নেওয়া বিচারকেরা, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে জেলা আদালতের বিচারকদের জন্য ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলা আদালত থেকে সমতা রক্ষা করে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।

এছাড়াও, বিচার বিভাগের বাজেট সংকট এবং নির্বাহী বিভাগের উপর পূর্ণ নির্ভরতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। বিচারকগণ দাবি করেন, সুপ্রীম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে অনতিবিলম্বে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ময়মনসিংহে ৭ জেলার বিচারকদের মতবিনিময় সভা

প্রকাশের সময় : ০৪:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

 স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে ময়মনসিংহে ৭ জেলার বিচারকেরা মতবিনিময় সভা করেছেন।

শনিবার সকালে নগরীর একটি রিসোর্টে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এর ‘জুলাই বিপ্লবের অঙ্গীকার ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল খুলনার বিচারক মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শেরপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জহিরুল কবির, নেত্রকোনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হাফিজুর রহমান, জামালপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরুল আমীন বিপ্লব এবং গাজীপুরের মহানগর দায়রা জজ শাহরিয়ার কবির উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাতটি জেলার প্রায় দেড়শ বিচারক অংশ নেন।

সভার শুরুতে বিচারকবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধার সাথে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। বক্তারা তাঁদের আত্মত্যাগকে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। সভায় বক্তারা বলেন, এই আত্মত্যাগ শোষণ, নিপীড়ন, বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় লড়াইয়ের অংশ।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও স্বাধীনতা অপরিহার্য হলেও, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখনো নির্বাহী বিভাগের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বিচারকদের পদ বৃদ্ধি, পদ-সৃজন এবং আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকায় বিচারিক কর্মঘণ্টার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দিচ্ছে। সভায় উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি উঠে আসে।

সভায় অংশ নেওয়া বিচারকেরা, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে জেলা আদালতের বিচারকদের জন্য ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলা আদালত থেকে সমতা রক্ষা করে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।

এছাড়াও, বিচার বিভাগের বাজেট সংকট এবং নির্বাহী বিভাগের উপর পূর্ণ নির্ভরতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। বিচারকগণ দাবি করেন, সুপ্রীম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে অনতিবিলম্বে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।