ঢাকা ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনার আটপাড়ায় জুয়ার আসর থেকে লাখ টাকা লুটের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে 

নেত্রকোনার আটপাড়ায় অভিযানের নামে জুয়ার আসর থেকে লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- তাস খেলার সময় হঠাৎ হাজির হয় থানার এসআই আল মামুন ও এএসআই মশিউর রহমান  সুজনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। অভিযান দেখিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে তাদের পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেহ তল্লাশি করে প্রায় লাখ টাকা লুটে নেয়। পরে মামলায় ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করায় ভুক্তভোগীকে নানা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা।  বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় হায়দার মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন।

এরআগে গত রোববার রাতে উপজেলার যোগিরনগুয়া  এলাকা থেকে জুয়া খেলার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের থেকে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও পরদিন তাদের ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আটকরা হলেন, উপজেলার যোগিরনগুয়া গ্রামের আ. কাশেম (৫০), অলি (৪০), আটাশিয়া গ্রামের জজ মিয়া (৪০), মো. হায়দার মিয়া (৪৮) ও মহেশ্বরখিলা গ্রামের মোঃ সাফায়েত হোসেন (২৮)।

ভুক্তভোগী হায়দার মিয়া জানান, আমি ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটার ব্যবসা করি। হাতে প্রায়ই টাকা থাকে। ওইদিন আমার কাছে ৩৩ হাজার ৪১০ টাকা ছিলো। আমরা চারজন মিলে তাস খেলছিলাম, হঠাৎ  সেখানে এসআই মামুন ও এএসআই সুজনসহ কয়েকজন পুলিশ এসে পৌছে। জুয়া খেলছি এমন অভিযোগে আমাদের আটক করে। সাফায়েত নামে একটা ছেলে আমাদের জন্য চা নিয়ে এসেছিল তাকেও আটক করে। সবগুলো টাকা কেড়ে নেয়। অন্য সবার কাছে যত টাকা ছিলো সবগুলো তল্লাশি করে কেড়ে নেয়। পরে টেবিলে তাস আর ১৪৯০ টাকা রেখে ভিডিও করে আমাদের থানায় নিয়ে যায়। এসম পুলিশ হুমকি দেয় টাকার বিষয়ে কথা বললে বড় মামলায় ফাঁসানো হবে। আমরা ভয়ে চুপ থাকি। পরদিন ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকা তারা কেড়ে নেয়। আদালত থেকে এসে টাকার বিষয়ে অভিযোগ করায় উল্টো আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন এসআই মামিন। তিনি গতকাল বিকেলে আমার বাড়িতে গিয়ে গায়েবি অভিযোগের তদন্ত করে মামলার ভয় দেখিয়ে এসেছেন। বিষয়টি আজ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।

অপর ভুক্তভোগী  মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, আমার কাছে ঘটনার সময় সাড়ে ১২ হাজার টাকা ছিল। পুলিশ ভিডিও করার আগে টাকাটা পকেটে নিয়ে নেয়। পুলিশ আমাকে বলে যদি বলি আমার কাছে টাকা ছিল তাহলে বড় মামলায় ঢুকিয়ে দিবে। ভুক্তভোগী জজ মিয়া বলেন, খেলার সময় আমার কাছে ১৯ হাজার ৭০ টাকা ছিল। ভিডিও করার সময় আমাদের চুপ থাকতে বলে অন্যথায় বড় মামলায় ঢুকিয়ে দিবে হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী  আ. কাশেম বলেন খেলার সময় আমার নিকট সাড়ে ১৫ হাজার টাকা ছিল। পুলিশ টাকা পকেটে ঢুকিয়ে আমাকে বলে আমরা ভিডিও করার সময় যা বলব তাই বলতে হবে, না হলে বড় মামলায় চালান করে দিব বলে আমাদের নিকট থেকে ভিডিও সাক্ষাতকার নেয়।

মামলার স্বাক্ষীরাও ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। পুলিশ তাদের জোর করে স্বাক্ষী বানিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

মামলায় স্বাক্ষী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঘুমে ছিলাম। পুলিশ আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। কি হয়েছিল আমি কিছু জানি না।

অপর স্বাক্ষী  মুহিত এর বাবা বলেন, আমরা ঘটনা দেখি নাই। আমরা ঘটনাস্থলে যাই ও নাই। পুলিশ আমার ছেলের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে নিয়েছে। ঘটনার সময় আমি এবং আমার ছেলে আমাদের ঘরেই ছিলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই মশিউর রহমান সুজন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যা পেয়েছি তাই উদ্ধার  দেখিয়েছি। বিস্তারিত জানতে এসআই মামুন স্যারকে কল দেন।’

এ বিষয়ে এসআই আল মামুন বলেন, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা। তাদের কাছে যা পেয়েছি তাই উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

আটপাড়া থানার ওসি আশরাফুজ্জামান বলেন, অফিসারার ঘটনাস্থলে যা পেয়েছে তাই দিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে।  এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

পুলিশ সুপার মীর্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, বিষয়টি অবহিত হয়েছি।  ঘটনা তদন্ত করে  সত্যতা মিললে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

নেত্রকোনার আটপাড়ায় জুয়ার আসর থেকে লাখ টাকা লুটের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে 

প্রকাশের সময় : ০৯:৩১:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

নেত্রকোনার আটপাড়ায় অভিযানের নামে জুয়ার আসর থেকে লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- তাস খেলার সময় হঠাৎ হাজির হয় থানার এসআই আল মামুন ও এএসআই মশিউর রহমান  সুজনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। অভিযান দেখিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে তাদের পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেহ তল্লাশি করে প্রায় লাখ টাকা লুটে নেয়। পরে মামলায় ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করায় ভুক্তভোগীকে নানা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা।  বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় হায়দার মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন।

এরআগে গত রোববার রাতে উপজেলার যোগিরনগুয়া  এলাকা থেকে জুয়া খেলার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের থেকে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও পরদিন তাদের ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আটকরা হলেন, উপজেলার যোগিরনগুয়া গ্রামের আ. কাশেম (৫০), অলি (৪০), আটাশিয়া গ্রামের জজ মিয়া (৪০), মো. হায়দার মিয়া (৪৮) ও মহেশ্বরখিলা গ্রামের মোঃ সাফায়েত হোসেন (২৮)।

ভুক্তভোগী হায়দার মিয়া জানান, আমি ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটার ব্যবসা করি। হাতে প্রায়ই টাকা থাকে। ওইদিন আমার কাছে ৩৩ হাজার ৪১০ টাকা ছিলো। আমরা চারজন মিলে তাস খেলছিলাম, হঠাৎ  সেখানে এসআই মামুন ও এএসআই সুজনসহ কয়েকজন পুলিশ এসে পৌছে। জুয়া খেলছি এমন অভিযোগে আমাদের আটক করে। সাফায়েত নামে একটা ছেলে আমাদের জন্য চা নিয়ে এসেছিল তাকেও আটক করে। সবগুলো টাকা কেড়ে নেয়। অন্য সবার কাছে যত টাকা ছিলো সবগুলো তল্লাশি করে কেড়ে নেয়। পরে টেবিলে তাস আর ১৪৯০ টাকা রেখে ভিডিও করে আমাদের থানায় নিয়ে যায়। এসম পুলিশ হুমকি দেয় টাকার বিষয়ে কথা বললে বড় মামলায় ফাঁসানো হবে। আমরা ভয়ে চুপ থাকি। পরদিন ১৪৯০ টাকা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকা তারা কেড়ে নেয়। আদালত থেকে এসে টাকার বিষয়ে অভিযোগ করায় উল্টো আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন এসআই মামিন। তিনি গতকাল বিকেলে আমার বাড়িতে গিয়ে গায়েবি অভিযোগের তদন্ত করে মামলার ভয় দেখিয়ে এসেছেন। বিষয়টি আজ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।

অপর ভুক্তভোগী  মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, আমার কাছে ঘটনার সময় সাড়ে ১২ হাজার টাকা ছিল। পুলিশ ভিডিও করার আগে টাকাটা পকেটে নিয়ে নেয়। পুলিশ আমাকে বলে যদি বলি আমার কাছে টাকা ছিল তাহলে বড় মামলায় ঢুকিয়ে দিবে। ভুক্তভোগী জজ মিয়া বলেন, খেলার সময় আমার কাছে ১৯ হাজার ৭০ টাকা ছিল। ভিডিও করার সময় আমাদের চুপ থাকতে বলে অন্যথায় বড় মামলায় ঢুকিয়ে দিবে হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী  আ. কাশেম বলেন খেলার সময় আমার নিকট সাড়ে ১৫ হাজার টাকা ছিল। পুলিশ টাকা পকেটে ঢুকিয়ে আমাকে বলে আমরা ভিডিও করার সময় যা বলব তাই বলতে হবে, না হলে বড় মামলায় চালান করে দিব বলে আমাদের নিকট থেকে ভিডিও সাক্ষাতকার নেয়।

মামলার স্বাক্ষীরাও ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। পুলিশ তাদের জোর করে স্বাক্ষী বানিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

মামলায় স্বাক্ষী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঘুমে ছিলাম। পুলিশ আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। কি হয়েছিল আমি কিছু জানি না।

অপর স্বাক্ষী  মুহিত এর বাবা বলেন, আমরা ঘটনা দেখি নাই। আমরা ঘটনাস্থলে যাই ও নাই। পুলিশ আমার ছেলের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে নিয়েছে। ঘটনার সময় আমি এবং আমার ছেলে আমাদের ঘরেই ছিলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই মশিউর রহমান সুজন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যা পেয়েছি তাই উদ্ধার  দেখিয়েছি। বিস্তারিত জানতে এসআই মামুন স্যারকে কল দেন।’

এ বিষয়ে এসআই আল মামুন বলেন, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা। তাদের কাছে যা পেয়েছি তাই উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

আটপাড়া থানার ওসি আশরাফুজ্জামান বলেন, অফিসারার ঘটনাস্থলে যা পেয়েছে তাই দিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে।  এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

পুলিশ সুপার মীর্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, বিষয়টি অবহিত হয়েছি।  ঘটনা তদন্ত করে  সত্যতা মিললে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।