
কেন্দুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনিয়মের পাহাড় সমান অভিযোগে উঠছে । নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা ঘিরে সম্প্রতি একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে—বিশেষত ৩২৬ ধারার মামলার জন্য ইনজুরি সার্টিফিকেট ইস্যু নিয়ে। টাকা দিলেই মিলছে মারামারি অঘাতের সার্টিফিকেট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে সার্টিফিকেট বানিজ্য। হাসপাতালের একশ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারির যোগসাজসে চলছে এই রমরমা ব্যাবসা।
গ্রামাঞ্চলে কোন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের কোন মারামারি হলে তাদেরর বমোত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালে দবায়িত্ব থাকা চিকিৎসক ্এখানে প্রাথমিক কিকিৎসা করে কিংবা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও আঘাতের রিপোর্ট সরবরাহ করা হয় এখান থেকেই। এবং এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে স্থানীয়দের মধ্যে।
সম্প্রতি বলাইশিমুল ইউনিয়নের নোয়াদিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান (৫০) জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মারামারিতে গুরুতর আহত হয়ে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন চিকিৎার জন্য। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃ।পক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়ার এখতিয়ার থাকা সত্ত্বেও MMCH-এর পরিবর্তে কেন্দুয়া হাসপাতাল থেকেই ইনজুরি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। কেন্দুয়া থানা কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল সার্টি ফিকেটে উল্লেখ করা হয় আঘাতটি করা হয়েছে ধারালো যন্ত্র দিয়ে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া মেডিকেল রিপোর্টে একই আঘাতকে ‘ভোতা অস্ত্রের’ বলে উল্লেখ করা হয়। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন মতামত আদালতে জটিলতা তৈরি করছে—বিশেষ করে কোন রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণ রোগী কিংবা মামলার পক্ষ থেকে ইনজুরি সার্টিফিকেট চাইলে হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, “আমরা ২৬ ধারার মামলার রিপোর্ট দিতে পারি না। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, গোপনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এক শ্রেণির লোকজন অনায়াসে এই রিপোর্ট সংগ্রহ করছে।
কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন—“যার টাকা, তারই সার্টিফিকেট!” একজন ভুক্তভোগীর ভাষায়, “আমি চাইতে গেলে বলল এটি এখানে হয় না। অথচ অন্য একজন কিছু টাকার বিনিময়ে পরদিনই রিপোর্ট নিয়ে চলে গেল।” এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. অরুপ কুমার সরকার বলেন, “আমরা রোগীর প্রাথমিক ইনজুরি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দিতে পারি। এটা ভুল ধারণা যে, ২৬ ধারার রিপোর্ট আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না। তবে দায় সম্পূর্ণ চিকিৎসকের ওপর থাকে।” টিএসও ডা. নাইম হাসান জানান, “আমরা ইনজুরি রিপোর্টে আইনের কোনো ধারা লিখি না। কোর্ট পরবর্তীতে সেটি মূল্যায়ন করে আইন অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেন।
রেফার করার আগেও রোগীর শারীরিক অবস্থা নথিভুক্ত করা হয়, তার ভিত্তিতেই রিপোর্ট হতে পারে।কোর্ট চাইলে সংস্লিষ্ঠ চিকিৎসক এবং রেজিস্ট্রার দুটোই তলব করে সত্যতা যাচাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের বিষয় আমার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট প্রমান সহ অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে । স্থানীয় এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগীর মূল চিকিৎসা যেখান থেকে হয়েছে, সেই হাসপাতালের রিপোর্টই সাধারণত প্রামাণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ের ইনজুরি রিপোর্ট বিচার কার্যে প্রভাব ফেললেও, যদি চিকিৎসা না হয় বা ভিন্ন রিপোর্ট হয়, তাহলে এই সার্টি ফিকেট আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে—রোগীর মূল চিকিৎসা না করেই কীভাবে ইনজুরি সার্টিফিকেট ইস্যু হলো? আর যদি সত্যিই এ ধরনের রিপোর্ট আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে তা শুধু অনৈতিকই নয়, বরং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার মত গুরুতর অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত তদন্ত ও নজরদারির ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এমন অনিয়ম ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি করবে—যেখানে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।