ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাওরের আতঙ্ক বজ্রপাত: বাঁচতে চায় হাওরবাসী, ঝড়ের সাথে নেমে আসে মৃত্যু,

 নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত এখন প্রতিদিনের আতঙ্ক

বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত সময়টা কৃষক ও জেলেদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসে। প্রতিবার ঝড়ের আগে গর্জে ওঠে মেঘ, আর তারপর নেমে আসে মৃত্যু।

গত ২৮ এপ্রিল মদন উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামে ৯ বছর বয়সী মাদরাসাছাত্র আরাফাত মিয়া সকালে মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে প্রাণ হারায়। একই দিনে কলমাকান্দার ধুনন্দ গ্রামে মারা যান মাদরাসা শিক্ষক দিদারুল ইসলাম। এমন মৃত্যু এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়, বরং নিয়মিত ট্র্যাজেডি হয়ে উঠেছে হাওরবাসীর জীবনে।

আরাফাতের শোকার্ত বাবা-মা বলেন, “প্রতি বছর মানুষ মরছে, কিন্তু সরকার শুধু রিপোর্ট নেয়। হাওরে যদি বজ্র নিরোধক থাকতো, হয়তো আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকত।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝড়ের আগাম বার্তা থাকলেও বজ্রপাত থেকে বাঁচার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। তাঁরা বলেন, “বজ্র নিরোধক দণ্ড চাই, তালগাছ চাই। আর এই জন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ দরকার।”

নেত্রকোনা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, “জেলায় এখন পর্যন্ত ৩২টি বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চেষ্টা চলছে আরও স্থাপন করার।”

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, “এই বর্ষা মৌসুমে হাওর ও সমতলে তালগাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু প্রকৃতির ওপর ভরসা না রেখে প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও জনসচেতনতাকে সামনে রেখে বজ্রপাত রোধে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। হাওরবাসীর জীবন যেন আর এই নীরব ঘাতকের শিকার না হয়—এটাই সময়ের দাবি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

হাওরের আতঙ্ক বজ্রপাত: বাঁচতে চায় হাওরবাসী, ঝড়ের সাথে নেমে আসে মৃত্যু,

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

 নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত এখন প্রতিদিনের আতঙ্ক

বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত সময়টা কৃষক ও জেলেদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসে। প্রতিবার ঝড়ের আগে গর্জে ওঠে মেঘ, আর তারপর নেমে আসে মৃত্যু।

গত ২৮ এপ্রিল মদন উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামে ৯ বছর বয়সী মাদরাসাছাত্র আরাফাত মিয়া সকালে মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতে প্রাণ হারায়। একই দিনে কলমাকান্দার ধুনন্দ গ্রামে মারা যান মাদরাসা শিক্ষক দিদারুল ইসলাম। এমন মৃত্যু এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়, বরং নিয়মিত ট্র্যাজেডি হয়ে উঠেছে হাওরবাসীর জীবনে।

আরাফাতের শোকার্ত বাবা-মা বলেন, “প্রতি বছর মানুষ মরছে, কিন্তু সরকার শুধু রিপোর্ট নেয়। হাওরে যদি বজ্র নিরোধক থাকতো, হয়তো আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকত।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝড়ের আগাম বার্তা থাকলেও বজ্রপাত থেকে বাঁচার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। তাঁরা বলেন, “বজ্র নিরোধক দণ্ড চাই, তালগাছ চাই। আর এই জন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ দরকার।”

নেত্রকোনা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, “জেলায় এখন পর্যন্ত ৩২টি বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চেষ্টা চলছে আরও স্থাপন করার।”

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, “এই বর্ষা মৌসুমে হাওর ও সমতলে তালগাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু প্রকৃতির ওপর ভরসা না রেখে প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও জনসচেতনতাকে সামনে রেখে বজ্রপাত রোধে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ। হাওরবাসীর জীবন যেন আর এই নীরব ঘাতকের শিকার না হয়—এটাই সময়ের দাবি।