ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় সাত যুবক কারাগারে

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় উল্টো পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন সাতজন কর্মজীবী যুবক। স্থানীয়দের অভিযোগ, যিনি প্রকৃত অপরাধী, তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, অথচ নির্দোষ যুবকদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক মামলায়। 

ঘটনার শুরু সোমবার ৯ জুন  বিকেলে, আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠ সংলগ্ন মুদি দোকানে। দোকানটি রফিকুল ইসলামের। সেদিন সেখানে হাজির হন শাহেদ নামে এক যুবক, যিনি নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দিয়ে দাবি করেন তিনি স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।

রফিকুল জানান, শাহেদ প্রায়ই দোকান থেকে বিনা পয়সায় সিগারেট নিতেন। টাকা চাইলে বলতেন, “পরে দেব।” কিন্তু সেদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল বের করে ভয় দেখিয়ে বলেন, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেব।” এরপর চালান ভাঙচুর ও নগদ অর্থ লুট।চিৎকার শুনে আশপাশের যুবকেরা—যারা মাঠে ফুটবল খেলছিলেন—দৌড়ে এসে শাহেদকে বাধা দেন। তখন উত্তেজনা আরও বাড়ে। স্থানীয় মুরুব্বিরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমানকে ঘটনাটা জানাই। সম্ভবত এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। পরদিন, ১০ জুন দুপুরে, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে রাস্তা আটকে মারধর করে শাহেদের দল। দুটি ঘটনারই পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পাল্টা অভিযান চালায় পুলিশ। ১১ জুন রাতে কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো, যার আয়োজক ছিলেন চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত কয়েকজন যুবক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডেকে নেয়। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আর বাড়ি ফেরেননি।পরদিন জানা যায়, ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ হিসেবে তাদের একটি রাজনৈতিক মামলায় দেখানো হয়েছে এবং ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার যুবকদের পরিবার বলছে, “আমাদের ছেলেরা কেউ রাজনীতি করে না। কেউ গার্মেন্টসে কাজ করে, কেউ দিনমজুর, কেউ আবার নাবিক। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছে, রাজনীতি করার সময়ই বা পেল কবে? এক অভিভাবকের প্রশ্ন, “আমরা যদি অপরাধীর বিচার চাই, তাহলে কি নিজেই অপরাধী হয়ে যাই?”

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনি না। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটিও নেই। কেউ যদি যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করে, প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের আওতায় আনা। আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল নিয়মিত অভিযানের অংশ।”

গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না—জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত নই।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় যুবদল নেতার চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় সাত যুবক কারাগারে

প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় কথিত এক ‘যুবদল নেতা’র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় উল্টো পুলিশি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন সাতজন কর্মজীবী যুবক। স্থানীয়দের অভিযোগ, যিনি প্রকৃত অপরাধী, তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, অথচ নির্দোষ যুবকদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক মামলায়। 

ঘটনার শুরু সোমবার ৯ জুন  বিকেলে, আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি মাঠ সংলগ্ন মুদি দোকানে। দোকানটি রফিকুল ইসলামের। সেদিন সেখানে হাজির হন শাহেদ নামে এক যুবক, যিনি নিজেকে ‘যুবদল নেতা’ পরিচয় দিয়ে দাবি করেন তিনি স্থানীয় জুয়েল মোল্লার ছেলে।

রফিকুল জানান, শাহেদ প্রায়ই দোকান থেকে বিনা পয়সায় সিগারেট নিতেন। টাকা চাইলে বলতেন, “পরে দেব।” কিন্তু সেদিন টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল বের করে ভয় দেখিয়ে বলেন, “বিশ হাজার টাকা না দিলে তোর দোকান গুঁড়িয়ে দেব।” এরপর চালান ভাঙচুর ও নগদ অর্থ লুট।চিৎকার শুনে আশপাশের যুবকেরা—যারা মাঠে ফুটবল খেলছিলেন—দৌড়ে এসে শাহেদকে বাধা দেন। তখন উত্তেজনা আরও বাড়ে। স্থানীয় মুরুব্বিরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

রফিকুল বলেন, “আমি থানায় গিয়ে এসআই মফিজুর রহমানকে ঘটনাটা জানাই। সম্ভবত এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। পরদিন, ১০ জুন দুপুরে, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা কাওসার খান নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে রাস্তা আটকে মারধর করে শাহেদের দল। দুটি ঘটনারই পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে আলফাডাঙ্গা থানায়।কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পাল্টা অভিযান চালায় পুলিশ। ১১ জুন রাতে কামারগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় ঈদের মিলনমেলা ও নৈশভোজ চলছিলো, যার আয়োজক ছিলেন চাকরিজীবী ও প্রবাসফেরত কয়েকজন যুবক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ পুলিশ এসে সম্রাট, আব্দুল্লাহ কাজীসহ সাতজনকে ডেকে নেয়। বলা হয়, কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন, রাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আর বাড়ি ফেরেননি।পরদিন জানা যায়, ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ হিসেবে তাদের একটি রাজনৈতিক মামলায় দেখানো হয়েছে এবং ফরিদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার যুবকদের পরিবার বলছে, “আমাদের ছেলেরা কেউ রাজনীতি করে না। কেউ গার্মেন্টসে কাজ করে, কেউ দিনমজুর, কেউ আবার নাবিক। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছে, রাজনীতি করার সময়ই বা পেল কবে? এক অভিভাবকের প্রশ্ন, “আমরা যদি অপরাধীর বিচার চাই, তাহলে কি নিজেই অপরাধী হয়ে যাই?”

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শাহিন মোল্লা বলেন, “শাহেদ নামের কাউকে আমরা চিনি না। ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের কোনো কমিটিও নেই। কেউ যদি যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করে, প্রশাসনের উচিত তাকে আইনের আওতায় আনা। আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, “এই অভিযানে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল নিয়মিত অভিযানের অংশ।”

গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না—জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আছে, তবে তারা কোনো পদে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত নই।”