ঢাকা ০৪:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশির সিরাপ বিষক্রিয়ায় ১১ শিশুর মৃত্যু মধ্যপ্রদেশে চিকিৎসক গ্রেফতার

  • ঢাকা প্রতিনিধী
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৩২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহিত

‘কোলড্রিফ’ নামক কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করার অভিযোগে স্থানীয় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীন সোনিকে গ্রেফতার করেছে মধ্যপ্রদেশের পুলিশ। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলায় শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় বড় এ পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। সরকারি কর্মকর্তারা রবিবার ভোরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডা. প্রবীন সোনি পেশায় একজন সরকারি শিশু বিশেষজ্ঞ (পেডিয়াট্রিশিয়ান)। তবে তিনি তার নিজস্ব বেসরকারি চেম্বারে শিশুদের ওই সিরাপ প্রেসক্রাইব করেন। এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শিশুর সবাই ওই বিষাক্ত সিরাপটি সেবন করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মধ্যপ্রদেশ সরকার তামিলনাড়ুর কানচিপুরাম জেলার শ্রীসান ফার্মাসিউটিক্যালসনামের ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। ওই কোম্পানিটি এই ‘কোলড্রিফ’ কাশির সিরাপ তৈরি করে।

সরকার ইতোমধ্যেই রাজ্যজুড়ে ‘কোলড্রিফ’ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ পরীক্ষায় দেখা গেছে সিরাপে ছিল ৪৮.৬ শতাংশ ডাইইথিলিন গ্লাইকল। এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ এবং কিডনি বিকল ও মৃত্যু ঘটাতে পারে। চেন্নাইয়ের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর তামিলনাড়ুর ড্রাগ কন্ট্রোল ডিরেক্টরেট ঘোষণা করে যে, এই সিরাপটি মানসম্মত নয়।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন সোমবার ‘কোলড্রিফ’ ও ‘নেক্সট্রো-ডি.এস’ নামের দুটি কাশির সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। ‘কোলড্রিফ’-এর পরীক্ষার রিপোর্ট শনিবার পাওয়া গেলেও ‘নেক্সট্রো-ডি.এস.’-এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত শিশুদের পরিবার জানায়, সেপ্টেম্বরের শুরুতে তাদের সন্তানদের সর্দি-জ্বর হয়।

চিকিৎসক তাদের রুটিন ওষুধের সঙ্গে কাশির সিরাপও দেন। প্রথমে সুস্থতার লক্ষণ দেখা গেলেও কয়েকদিন পর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। তারপর কিডনি সংক্রমণ ও ব্যর্থতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত শিশুরা মারা যায়। পরে কিডনি বায়োপসিতে প্রমাণ মেলে তাদের শরীরে ডাইইথিলিন গ্লাইকল বিষক্রিয়ার চিহ্ন ছিল।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এক্সে লিখেছেন, ছিন্দওয়াড়ায় ‘কোলড্রিফ’ সিরাপের কারণে শিশুদের মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। পুরো রাজ্যে এই সিরাপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই কোম্পানির অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও বন্ধ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সিরাপের উৎপাদন কারখানা তামিলনাড়ুর কানচিপুরামে অবস্থিত হওয়ায় আমরা তামিলনাড়ু সরকারকে ল্যাব টেস্ট করতে অনুরোধ করেছিলাম।

রবিবার সকালে রিপোর্ট হাতে এসেছে। তার ভিত্তিতেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও কেরালাও ইতোমধ্যে ‘কোলড্রিফ’ সিরাপ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ ওই রাজ্যগুলোতেও একই ধরনের শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পুকুরে ডুবে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হবিগঞ্জে

কাশির সিরাপ বিষক্রিয়ায় ১১ শিশুর মৃত্যু মধ্যপ্রদেশে চিকিৎসক গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ১২:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

‘কোলড্রিফ’ নামক কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করার অভিযোগে স্থানীয় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীন সোনিকে গ্রেফতার করেছে মধ্যপ্রদেশের পুলিশ। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলায় শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় বড় এ পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। সরকারি কর্মকর্তারা রবিবার ভোরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডা. প্রবীন সোনি পেশায় একজন সরকারি শিশু বিশেষজ্ঞ (পেডিয়াট্রিশিয়ান)। তবে তিনি তার নিজস্ব বেসরকারি চেম্বারে শিশুদের ওই সিরাপ প্রেসক্রাইব করেন। এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শিশুর সবাই ওই বিষাক্ত সিরাপটি সেবন করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মধ্যপ্রদেশ সরকার তামিলনাড়ুর কানচিপুরাম জেলার শ্রীসান ফার্মাসিউটিক্যালসনামের ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। ওই কোম্পানিটি এই ‘কোলড্রিফ’ কাশির সিরাপ তৈরি করে।

সরকার ইতোমধ্যেই রাজ্যজুড়ে ‘কোলড্রিফ’ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ পরীক্ষায় দেখা গেছে সিরাপে ছিল ৪৮.৬ শতাংশ ডাইইথিলিন গ্লাইকল। এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ এবং কিডনি বিকল ও মৃত্যু ঘটাতে পারে। চেন্নাইয়ের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর তামিলনাড়ুর ড্রাগ কন্ট্রোল ডিরেক্টরেট ঘোষণা করে যে, এই সিরাপটি মানসম্মত নয়।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন সোমবার ‘কোলড্রিফ’ ও ‘নেক্সট্রো-ডি.এস’ নামের দুটি কাশির সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। ‘কোলড্রিফ’-এর পরীক্ষার রিপোর্ট শনিবার পাওয়া গেলেও ‘নেক্সট্রো-ডি.এস.’-এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত শিশুদের পরিবার জানায়, সেপ্টেম্বরের শুরুতে তাদের সন্তানদের সর্দি-জ্বর হয়।

চিকিৎসক তাদের রুটিন ওষুধের সঙ্গে কাশির সিরাপও দেন। প্রথমে সুস্থতার লক্ষণ দেখা গেলেও কয়েকদিন পর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। তারপর কিডনি সংক্রমণ ও ব্যর্থতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত শিশুরা মারা যায়। পরে কিডনি বায়োপসিতে প্রমাণ মেলে তাদের শরীরে ডাইইথিলিন গ্লাইকল বিষক্রিয়ার চিহ্ন ছিল।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এক্সে লিখেছেন, ছিন্দওয়াড়ায় ‘কোলড্রিফ’ সিরাপের কারণে শিশুদের মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। পুরো রাজ্যে এই সিরাপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই কোম্পানির অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও বন্ধ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সিরাপের উৎপাদন কারখানা তামিলনাড়ুর কানচিপুরামে অবস্থিত হওয়ায় আমরা তামিলনাড়ু সরকারকে ল্যাব টেস্ট করতে অনুরোধ করেছিলাম।

রবিবার সকালে রিপোর্ট হাতে এসেছে। তার ভিত্তিতেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও কেরালাও ইতোমধ্যে ‘কোলড্রিফ’ সিরাপ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ ওই রাজ্যগুলোতেও একই ধরনের শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।