ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে ধোঁয়াশা, হতাশ ব্যবসায়ীরা

ঢাকাসহ সারাদেশে  কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে এবারও বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন দুপুর থেকেই নগরী ও গ্রাম বাংলার  বিভিন্ন মোড়ে সড়কের ওপর চামড়া সাজিয়ে অপেক্ষা করলেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি ব্যাবসায়ীরা।

অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, লবণযুক্ত সংরক্ষিত চামড়ার জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কাঁচা বা লবণবিহীন চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফলে বেশি দামে চামড়া কিনে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়ছেন।

মোহাম্মদ হোছাইন নামের এক মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি চামড়া গড়ে ৪০০ টাকায় কিনেছি। আড়তদাররা বলছেন ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে পারবেন। এবারও তো শুধু লোকসানই হবে। গত বছরও ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান দিয়েছিলাম।

এক ব্যবসায়ী জানান, ৫০টা বড় গরুর চামড়া কিনেছি গড়ে ৪৫০ টাকা করে। বিকেলে বিক্রি করেছি ৩৭০ টাকা করে।

জানা যায়, সরকার এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় বেশি নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া সারাদেশে ছাগলের  চামড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।

আড়তদাররা বলছেন, একটি চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচ মিলে প্রায় ৫০০ টাকা পড়ে। সেই সঙ্গে ট্যানারিমালিকেরা ২০ শতাংশ বাদ দেন, ফলে অধিক দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয় না।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে কেনার সুযোগ নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়টি মাথায় রাখেন না। এ কারণে অনেক সময় তারা লোকসান দেন। তাছাড়া এবার চামড়ার দাম এখনো পর্যন্ত ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ৬০০-৭০০ টাকাও দাম উঠেছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল বলেন, সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেটি মূলত সংরক্ষিত ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার জন্য। অনেকেই ভুলভাবে ধরে নেন, আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও এই দামে চামড়া কিনবেন। ট্যানারি মালিকেরা সাধারণত চামড়ার মান বিবেচনায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে থাকেন। তাছাড়া চট্টগ্রামে সব চামড়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হয় না। ঢাকায়ও পাঠাতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন ও আড়ত খরচ পড়ে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে অতিরিক্ত কাঁচা চামড়া থাকলে তা রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। আগের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে এবার চামড়া রপ্তানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। সঠিক সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করেছে।

এমআর/এমজে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

গাইবান্ধায় মাদক কারবারি গ্রেফতার

কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে ধোঁয়াশা, হতাশ ব্যবসায়ীরা

প্রকাশের সময় : ১০:১৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

ঢাকাসহ সারাদেশে  কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে এবারও বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন দুপুর থেকেই নগরী ও গ্রাম বাংলার  বিভিন্ন মোড়ে সড়কের ওপর চামড়া সাজিয়ে অপেক্ষা করলেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি ব্যাবসায়ীরা।

অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, লবণযুক্ত সংরক্ষিত চামড়ার জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কাঁচা বা লবণবিহীন চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফলে বেশি দামে চামড়া কিনে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়ছেন।

মোহাম্মদ হোছাইন নামের এক মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি চামড়া গড়ে ৪০০ টাকায় কিনেছি। আড়তদাররা বলছেন ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে পারবেন। এবারও তো শুধু লোকসানই হবে। গত বছরও ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান দিয়েছিলাম।

এক ব্যবসায়ী জানান, ৫০টা বড় গরুর চামড়া কিনেছি গড়ে ৪৫০ টাকা করে। বিকেলে বিক্রি করেছি ৩৭০ টাকা করে।

জানা যায়, সরকার এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় বেশি নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া সারাদেশে ছাগলের  চামড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।

আড়তদাররা বলছেন, একটি চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচ মিলে প্রায় ৫০০ টাকা পড়ে। সেই সঙ্গে ট্যানারিমালিকেরা ২০ শতাংশ বাদ দেন, ফলে অধিক দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয় না।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে কেনার সুযোগ নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়টি মাথায় রাখেন না। এ কারণে অনেক সময় তারা লোকসান দেন। তাছাড়া এবার চামড়ার দাম এখনো পর্যন্ত ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ৬০০-৭০০ টাকাও দাম উঠেছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল বলেন, সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেটি মূলত সংরক্ষিত ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার জন্য। অনেকেই ভুলভাবে ধরে নেন, আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও এই দামে চামড়া কিনবেন। ট্যানারি মালিকেরা সাধারণত চামড়ার মান বিবেচনায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে থাকেন। তাছাড়া চট্টগ্রামে সব চামড়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হয় না। ঢাকায়ও পাঠাতে হয়। এতে বাড়তি পরিবহন ও আড়ত খরচ পড়ে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে অতিরিক্ত কাঁচা চামড়া থাকলে তা রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। আগের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে এবার চামড়া রপ্তানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। সঠিক সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করেছে।

এমআর/এমজে