ঢাকা ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরুর মাংস সিদ্ধ করলে যতটা নিরাপদ, আগুনে পোড়ালে ততটা নিরাপদ নয়, সিভিল সার্জন

ফাইল ফটো

কোরবানির ঈদ মানেই নানা পদের মাংস রান্নার আয়োজন। এইবারে ঈদে প্রচুর গরম পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঈদে তো কম বেশি সবারই গরুর মাংস খাওয়া হয়েই থাকে। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এতে রয়েছে উচ্চ মানের প্রোটিন। গরু, খাসি, উট, দুম্বা, মহিষ বা ভেড়ার মাংসকে রেড মিট বলে। এতে রক্তস্বল্পতা রোধ, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধসহ নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তবে অবশ্যই পরিমিত খেতে হবে। কেননা গরমে লাল মাংস একটানা দীর্ঘদিন ধরে খেলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ-বালাই।

চিকিৎসা পরিভাষায় গরু, খাসি, মহিষ, ভেড়ার মাংসকে লাল মাংস বা রেড মিট বলা হয়ে থাকে। এসব মাংসে মায়োগ্লোবিন নামক উপাদান বেশি থাকার কারণে মাংস লাল হয়। এই মাংসে উচ্চমাত্রার চর্বি ও কোলেস্টেরল থাকায় খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায়। তাই রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হয়ে রেড মিট খাওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত তাদের।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ কোরবানি ঈদে গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়য়ে সচেতন থাকতে বলেছেন।

তিনি বলেন, ঈদুল আজহার সময় অনেকেই গরু কোরবানি দিয়ে থাকে। কিন্তু কোরবানির সময় গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা জানি গরুর মাংস একটি চর্বিযুক্ত খাবার। এর প্রত্যেকটি আঁশের মধ্যেই চর্বি থাকে। এই চর্বি কিন্তু আমরা সবাই হজম করতে পারি না। গরুর মাংসের চর্বি অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে সেটা আমাদের রক্তনালীর মধ্যে জমা হয়। এর ফলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের মতো জটিল রোগ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত চর্বি খেলে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে।

‘আমরা সাধারণত গরুর মাংস প্রতিদিন খাই না। সপ্তাহে ১/২ দিন খেয়ে থাকি। এখন গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। চর্বি হয়ে যাওয়া ও মোটা হওয়া ইত্যাদি কারণে অনেকেই এটা এড়িয়ে চলেন। অমরা যদি অতিরিক্ত গরুর মাংস ঈদ উপলক্ষে খেয়ে ফেলি তাহলে দেখা যাবে প্রথমেই আমাদের হজমের সমস্যা হবে, পেট ফুলে যাওয়া, পেটফাঁপা, পেটভারী, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে পেট কামড়ানো, বমি ও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেখা যায় অনেকে গরুর মাংসটা ঠিক মতো প্রক্রিয়াজাতকরণ না করে কাবাবের মতো পুড়িয়ে খেয়ে থাকে। সেটা আরও বেশি মারাত্মক। একটা মাংস পুরোপুরি সিদ্ধ করলে যতটা নিরাপদ হয়, আগুনে পোড়ালে ততটা নিরাপদ হয় না। আমরা যদি সচেতন হয়ে পরিমিত গরুর মাংস খায় তাহলে আমাদের কোন অসুবিধা হবে না।

এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপদেশ থাকবে কোরবানির সময় পরিমিত পর্যায়ে গরুর মাংস খেতে হবে।একবার খেতে বসলে ৩/৪ টুকরার বেশি না খাওয়া ভালো। একটু গ্যাপ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কারণ একটা মাংসে যখন ফ্যাট থাকে তা হজম হতে ৬/৭ ঘন্টার বেশি সময় লাগে।আমরা যদি একবারে বেশি খায় তাহলে হজম হতে সময় লাগবে। আমাদের পেটটা এক রকম মেশিনের মতো। এটার ওপর ওভারলোড দিলে সেটা ফেল হতে বাধ্য। এর ফলে পেট খারাপ, পেট ফাঁপা, বমি ইত্যাদি হতে পারে।

সিভিল সার্জন বলেন, ঈদের পরপরই আমাদের হাসপাতালগুলোতে পেটে সমস্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ নিয়ে অনেকেই আসেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গরুর মাংস বেশি খাওয়ার কারণে তাদের পেটের সমস্যাগুলো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

গরুর মাংস সিদ্ধ করলে যতটা নিরাপদ, আগুনে পোড়ালে ততটা নিরাপদ নয়, সিভিল সার্জন

প্রকাশের সময় : ০৫:২৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ফাইল ফটো

কোরবানির ঈদ মানেই নানা পদের মাংস রান্নার আয়োজন। এইবারে ঈদে প্রচুর গরম পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঈদে তো কম বেশি সবারই গরুর মাংস খাওয়া হয়েই থাকে। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এতে রয়েছে উচ্চ মানের প্রোটিন। গরু, খাসি, উট, দুম্বা, মহিষ বা ভেড়ার মাংসকে রেড মিট বলে। এতে রক্তস্বল্পতা রোধ, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধসহ নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তবে অবশ্যই পরিমিত খেতে হবে। কেননা গরমে লাল মাংস একটানা দীর্ঘদিন ধরে খেলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ-বালাই।

চিকিৎসা পরিভাষায় গরু, খাসি, মহিষ, ভেড়ার মাংসকে লাল মাংস বা রেড মিট বলা হয়ে থাকে। এসব মাংসে মায়োগ্লোবিন নামক উপাদান বেশি থাকার কারণে মাংস লাল হয়। এই মাংসে উচ্চমাত্রার চর্বি ও কোলেস্টেরল থাকায় খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায়। তাই রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হয়ে রেড মিট খাওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত তাদের।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ কোরবানি ঈদে গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়য়ে সচেতন থাকতে বলেছেন।

তিনি বলেন, ঈদুল আজহার সময় অনেকেই গরু কোরবানি দিয়ে থাকে। কিন্তু কোরবানির সময় গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা জানি গরুর মাংস একটি চর্বিযুক্ত খাবার। এর প্রত্যেকটি আঁশের মধ্যেই চর্বি থাকে। এই চর্বি কিন্তু আমরা সবাই হজম করতে পারি না। গরুর মাংসের চর্বি অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে সেটা আমাদের রক্তনালীর মধ্যে জমা হয়। এর ফলে স্ট্রোক ও হৃদরোগের মতো জটিল রোগ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত চর্বি খেলে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে।

‘আমরা সাধারণত গরুর মাংস প্রতিদিন খাই না। সপ্তাহে ১/২ দিন খেয়ে থাকি। এখন গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। চর্বি হয়ে যাওয়া ও মোটা হওয়া ইত্যাদি কারণে অনেকেই এটা এড়িয়ে চলেন। অমরা যদি অতিরিক্ত গরুর মাংস ঈদ উপলক্ষে খেয়ে ফেলি তাহলে দেখা যাবে প্রথমেই আমাদের হজমের সমস্যা হবে, পেট ফুলে যাওয়া, পেটফাঁপা, পেটভারী, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে পেট কামড়ানো, বমি ও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেখা যায় অনেকে গরুর মাংসটা ঠিক মতো প্রক্রিয়াজাতকরণ না করে কাবাবের মতো পুড়িয়ে খেয়ে থাকে। সেটা আরও বেশি মারাত্মক। একটা মাংস পুরোপুরি সিদ্ধ করলে যতটা নিরাপদ হয়, আগুনে পোড়ালে ততটা নিরাপদ হয় না। আমরা যদি সচেতন হয়ে পরিমিত গরুর মাংস খায় তাহলে আমাদের কোন অসুবিধা হবে না।

এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপদেশ থাকবে কোরবানির সময় পরিমিত পর্যায়ে গরুর মাংস খেতে হবে।একবার খেতে বসলে ৩/৪ টুকরার বেশি না খাওয়া ভালো। একটু গ্যাপ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কারণ একটা মাংসে যখন ফ্যাট থাকে তা হজম হতে ৬/৭ ঘন্টার বেশি সময় লাগে।আমরা যদি একবারে বেশি খায় তাহলে হজম হতে সময় লাগবে। আমাদের পেটটা এক রকম মেশিনের মতো। এটার ওপর ওভারলোড দিলে সেটা ফেল হতে বাধ্য। এর ফলে পেট খারাপ, পেট ফাঁপা, বমি ইত্যাদি হতে পারে।

সিভিল সার্জন বলেন, ঈদের পরপরই আমাদের হাসপাতালগুলোতে পেটে সমস্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ নিয়ে অনেকেই আসেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গরুর মাংস বেশি খাওয়ার কারণে তাদের পেটের সমস্যাগুলো হয়েছে।