ঢাকা ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ইউক্রেন , রাশিয়া, যুদ্ব বিরতি

বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইউক্রেন-রাশিয়া, এখনো হয়নি যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত

ফাইল ছবি

কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার দ্বিতীয় সরাসরি শান্তি আলোচনা। সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের এই মুখোমুখি আলোচনা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়। তবে সংক্ষিপ্ত এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মতি হয়েছে দুই দেশ।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত প্রস্তুতি তুরস্কের মধ্যস্থতায় দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। সোমবার ‘বুখারেস্ট নাইন’ (বি-নাইন) শীর্ষ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।

গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম মুখোমুখি আলোচনার ফলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছিল। সেই চুক্তির অধীনে উভয়পক্ষ এক হাজার করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সাময়িক শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল।জি-৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন ইস্তাম্বুল আলোচনার ওপর, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, যদি রাশিয়া আলোচনাকে অর্থহীন কথাবার্তায় পরিণত করে, তাহলে শুধু ইউরোপ নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও জি-৭’র মতো সব পক্ষকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে শক্তভাবে প্রভাবিত করছে। এতে ট্যাংকার ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি, বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা আর তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা পড়েছে। এই চাপ ছাড়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তিচুক্তির পথে আসবেন না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি।ইস্তাম্বুল আলোচনায় ইউক্রেন একটি বিস্তারিত শান্তি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া যেতে পারে। তবে এর শর্ত হলো—পুরো যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার পুনর্বহাল করা যায়।

এ ছাড়া ইউক্রেন তাদের প্রস্তাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে যে, সমস্ত বন্দির বিনিময়ে দুই দেশ একে অপরের সব বন্দিকে মুক্তি দেবে। অর্থাৎ, যেসব ইউক্রেনীয় বন্দি রাশিয়ার কাছে রয়েছে, তাদের বিনিময়ে রাশিয়ার বন্দিরাও মুক্তি পাবে।

আলোচনায় ইউক্রেনের আরও দাবি হল—রাশিয়ার দ্বারা অপহৃত ইউক্রেনীয় শিশুদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার এবং রাশিয়ার বন্দিদশায় থাকা বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার। এই প্রস্তাবগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যদিও যুদ্ধবিরতির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, কিন্তু বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন এই বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার দিকে, যা যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের শান্তি আলোচনা ও সমঝোতার পথ প্রশস্ত হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

ইউক্রেন , রাশিয়া, যুদ্ব বিরতি

বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইউক্রেন-রাশিয়া, এখনো হয়নি যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ফাইল ছবি

কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার দ্বিতীয় সরাসরি শান্তি আলোচনা। সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের এই মুখোমুখি আলোচনা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়। তবে সংক্ষিপ্ত এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মতি হয়েছে দুই দেশ।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত প্রস্তুতি তুরস্কের মধ্যস্থতায় দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। সোমবার ‘বুখারেস্ট নাইন’ (বি-নাইন) শীর্ষ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।

গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম মুখোমুখি আলোচনার ফলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছিল। সেই চুক্তির অধীনে উভয়পক্ষ এক হাজার করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সাময়িক শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল।জি-৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন ইস্তাম্বুল আলোচনার ওপর, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, যদি রাশিয়া আলোচনাকে অর্থহীন কথাবার্তায় পরিণত করে, তাহলে শুধু ইউরোপ নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও জি-৭’র মতো সব পক্ষকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে শক্তভাবে প্রভাবিত করছে। এতে ট্যাংকার ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি, বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা আর তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা পড়েছে। এই চাপ ছাড়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তিচুক্তির পথে আসবেন না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি।ইস্তাম্বুল আলোচনায় ইউক্রেন একটি বিস্তারিত শান্তি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া যেতে পারে। তবে এর শর্ত হলো—পুরো যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার পুনর্বহাল করা যায়।

এ ছাড়া ইউক্রেন তাদের প্রস্তাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে যে, সমস্ত বন্দির বিনিময়ে দুই দেশ একে অপরের সব বন্দিকে মুক্তি দেবে। অর্থাৎ, যেসব ইউক্রেনীয় বন্দি রাশিয়ার কাছে রয়েছে, তাদের বিনিময়ে রাশিয়ার বন্দিরাও মুক্তি পাবে।

আলোচনায় ইউক্রেনের আরও দাবি হল—রাশিয়ার দ্বারা অপহৃত ইউক্রেনীয় শিশুদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার এবং রাশিয়ার বন্দিদশায় থাকা বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার। এই প্রস্তাবগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যদিও যুদ্ধবিরতির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, কিন্তু বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন এই বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার দিকে, যা যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের শান্তি আলোচনা ও সমঝোতার পথ প্রশস্ত হতে পারে।