ঢাকা ০৪:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজী নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে মানববন্ধন হাজী লিটনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ – প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

 নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে ঐতিহাসিক রাজী নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১১টায় মোজাফফরপুর ইউনিয় এর পাছ হারুলিয়ায় “সচেতন গ্রামবাসী” ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা রাজী নদী ভরাট, নকশা পরিবর্তন, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটন সরকারি প্রভাব খাটিয়ে রাজী নদীর পুরনো নকশা পরিবর্তন করে সেটিকে “খাল” হিসেবে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। পরে সেই পরিবর্তিত নকশার ভিত্তিতে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়, যাতে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল।

কিন্তু বাস্তবে নদীর মূল প্রবাহের জায়গা ভরাট করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়, ফলে নদীটি সরকারি কাগজে কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অযৌক্তিক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অথচ ব্রিজটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

বিগত সরকারের আমলে কেউ এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হাজী লিটনের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালাত, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানিও করত। বর্তমানে তিনি নদীটিকে “ফিশারিজ প্রকল্প” দেখিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি দাবি করে অন্য এলাকার লোকজন দিয়ে দখল কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—ফরহাদ হোসেন, ইমরান হোসেন ও আব্দুর রহমান রতন মিয়া। তারা বলেন, “রাজী নদী কেবল একটি জলাশয় নয়, এটি হারুলিয়ার ঐতিহ্য ও জীবিকার উৎস। এই নদী বাঁচাতে আমরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।” স্থানীয় মেম্বার হুমায়ুন কবির বলেন, “এই ভূমিদস্যু লিটন হাজীর হাত থেকে রাজী নদী উদ্ধার করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।” অন্যদিকে, কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাইম উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত।

লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিকে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন—একটি প্রাকৃতিক নদী কীভাবে বন্দোবস্তের আওতায় আসে? কেন্দুয়া এসি ল্যান্ড অফিস কীভাবে নদীকে খাল হিসেবে দেখিয়ে এমন অনুমোদন দেয়? প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজ দ্রুত তদন্ত করে রাজী নদীকে তার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং দায়ী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

রাজী নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে মানববন্ধন হাজী লিটনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ – প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ১২:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

 নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে ঐতিহাসিক রাজী নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১১টায় মোজাফফরপুর ইউনিয় এর পাছ হারুলিয়ায় “সচেতন গ্রামবাসী” ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা রাজী নদী ভরাট, নকশা পরিবর্তন, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটন সরকারি প্রভাব খাটিয়ে রাজী নদীর পুরনো নকশা পরিবর্তন করে সেটিকে “খাল” হিসেবে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। পরে সেই পরিবর্তিত নকশার ভিত্তিতে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়, যাতে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল।

কিন্তু বাস্তবে নদীর মূল প্রবাহের জায়গা ভরাট করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়, ফলে নদীটি সরকারি কাগজে কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অযৌক্তিক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অথচ ব্রিজটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

বিগত সরকারের আমলে কেউ এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হাজী লিটনের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালাত, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানিও করত। বর্তমানে তিনি নদীটিকে “ফিশারিজ প্রকল্প” দেখিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি দাবি করে অন্য এলাকার লোকজন দিয়ে দখল কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—ফরহাদ হোসেন, ইমরান হোসেন ও আব্দুর রহমান রতন মিয়া। তারা বলেন, “রাজী নদী কেবল একটি জলাশয় নয়, এটি হারুলিয়ার ঐতিহ্য ও জীবিকার উৎস। এই নদী বাঁচাতে আমরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।” স্থানীয় মেম্বার হুমায়ুন কবির বলেন, “এই ভূমিদস্যু লিটন হাজীর হাত থেকে রাজী নদী উদ্ধার করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।” অন্যদিকে, কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাইম উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত।

লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিকে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন—একটি প্রাকৃতিক নদী কীভাবে বন্দোবস্তের আওতায় আসে? কেন্দুয়া এসি ল্যান্ড অফিস কীভাবে নদীকে খাল হিসেবে দেখিয়ে এমন অনুমোদন দেয়? প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় নাগরিক সমাজ দ্রুত তদন্ত করে রাজী নদীকে তার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং দায়ী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।