ঢাকা ০৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতি ইউনিয়নে তিনজন সার ডিলার, বাড়ছে জামানত – কার্যকর হচ্ছে নতুন নীতিমালা

কৃষি মন্ত্রণালয় নতুন বছরে সার বণ্টনে একটি নতুন নীতিমালা চালু করতে যাচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে সার ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।

ডিলারদের জামানত দ্বিগুণ করা হলেও কমিশন বাড়ানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের দাবি— এ নীতিমালার উদ্দেশ্য সার সিন্ডিকেট ভাঙা ও সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নীতিমালায় একাধিক ইতিবাচক দিক আছে। যেমন— দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা, বিএডিসি ও বিসিআইসির আলাদা ডিলার ব্যবস্থা বাতিল, অনিয়মে জড়িতদের বাদ দেওয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সার বিতরণ চালু করা এবং এক ছাতার নিচে সার ব্যবস্থাপনা আনা।

এগুলো নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এতসব উদ্যোগ কি সত্যিই সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম হবে? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।

একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডিলারশিপ পেয়েছেন, অনিয়ম ও কারসাজির ঘটনা সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু লাইসেন্স বাতিল করলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? একজন খুচরা সার ডিলারের মতে, যতদিন বিসিআইসি সার ডিলারের মাধ্যমে খুচরা ডিলারদের সার নিতে হবে, ততদিন সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। বড় ডিলাররা মূল নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে এবং খুচরা ডিলার তার উপর নির্ভরশীল থাকবে। ফলে কৃষক সার কিনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাবেন।

আমারও মনে হয়, প্রকৃত সমাধান এখানে নেই। সমাধান হলো— সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় সমহারে খুচরা ডিলারদের সার বরাদ্দ দেওয়া।

এতে বড় ডিলারের দৌরাত্ম্য কমবে, খুচরা পর্যায়ে স্বচ্ছতা বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্লকে কোন ফসল কত জমিতে হচ্ছে, কতজন কৃষক আবাদ করছে— এ তথ্য কৃষি কর্মকর্তারা সংগ্রহ করে মৌসুমভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করবেন। তালিকাভুক্ত কৃষকরাই সার উত্তোলন করতে পারবেন।

এতে একদিকে সিন্ডিকেট ভাঙবে, অন্যদিকে বাজারে সার নিয়ে কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির সুযোগও থাকবে না। অতএব, নীতিমালা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়— প্রয়োগপদ্ধতিই এখানে মূল চ্যালেঞ্জ।

যদি সরকার খুচরা কৃষকদের কেন্দ্র করে স্বচ্ছ বণ্টনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, তবে নতুন নীতিমালা সত্যিই কৃষকবান্ধব হবে। নইলে পুরনো সমস্যার নতুন মোড়ক হয়ে দাঁড়াবে এটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

রংপুরে কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ২র‌্যাব

প্রতি ইউনিয়নে তিনজন সার ডিলার, বাড়ছে জামানত – কার্যকর হচ্ছে নতুন নীতিমালা

প্রকাশের সময় : ১১:০৮:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

কৃষি মন্ত্রণালয় নতুন বছরে সার বণ্টনে একটি নতুন নীতিমালা চালু করতে যাচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে সার ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।

ডিলারদের জামানত দ্বিগুণ করা হলেও কমিশন বাড়ানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের দাবি— এ নীতিমালার উদ্দেশ্য সার সিন্ডিকেট ভাঙা ও সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নীতিমালায় একাধিক ইতিবাচক দিক আছে। যেমন— দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা, বিএডিসি ও বিসিআইসির আলাদা ডিলার ব্যবস্থা বাতিল, অনিয়মে জড়িতদের বাদ দেওয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সার বিতরণ চালু করা এবং এক ছাতার নিচে সার ব্যবস্থাপনা আনা।

এগুলো নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এতসব উদ্যোগ কি সত্যিই সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম হবে? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।

একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডিলারশিপ পেয়েছেন, অনিয়ম ও কারসাজির ঘটনা সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু লাইসেন্স বাতিল করলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? একজন খুচরা সার ডিলারের মতে, যতদিন বিসিআইসি সার ডিলারের মাধ্যমে খুচরা ডিলারদের সার নিতে হবে, ততদিন সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। বড় ডিলাররা মূল নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে এবং খুচরা ডিলার তার উপর নির্ভরশীল থাকবে। ফলে কৃষক সার কিনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাবেন।

আমারও মনে হয়, প্রকৃত সমাধান এখানে নেই। সমাধান হলো— সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় সমহারে খুচরা ডিলারদের সার বরাদ্দ দেওয়া।

এতে বড় ডিলারের দৌরাত্ম্য কমবে, খুচরা পর্যায়ে স্বচ্ছতা বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্লকে কোন ফসল কত জমিতে হচ্ছে, কতজন কৃষক আবাদ করছে— এ তথ্য কৃষি কর্মকর্তারা সংগ্রহ করে মৌসুমভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করবেন। তালিকাভুক্ত কৃষকরাই সার উত্তোলন করতে পারবেন।

এতে একদিকে সিন্ডিকেট ভাঙবে, অন্যদিকে বাজারে সার নিয়ে কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির সুযোগও থাকবে না। অতএব, নীতিমালা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়— প্রয়োগপদ্ধতিই এখানে মূল চ্যালেঞ্জ।

যদি সরকার খুচরা কৃষকদের কেন্দ্র করে স্বচ্ছ বণ্টনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, তবে নতুন নীতিমালা সত্যিই কৃষকবান্ধব হবে। নইলে পুরনো সমস্যার নতুন মোড়ক হয়ে দাঁড়াবে এটি।