ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বছরে আয় করেন ৪০ লাখ,দিনমজুর থেকে চারা উৎপাদনে সফল বিল্লাল

  • খুলনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২০৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহিত

বিস্তীর্ণ মাঠের এক পাশে সাদা পলিথিনে মোড়ানো উঁচু ঘর। কাঠামো লোহার পাইপ ও অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি। ছাউনি পলিথিনের। ভেতরে সারি সারি মাটির শয্যা, সবুজে ছেয়ে গেছে প্রতিটি শয্যা। নানা ধরনের সবজির চারা সেখানে লকলক করছে।

ঘরটির নাম ‘পলিনেট হাউস’। নেট, পলি ওয়েলপেপার ও লোহার কাঠামোয় তৈরি এ ঘরে সারা বছরই চারা উৎপাদিত হয়। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা যেকোনো মৌসুমে।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মাঠে এই পলিনেট হাউস তৈরি করেছেন বিল্লাল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক। মানসম্মত চারা উৎপাদন করে তিনি এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। অর্জন করেছেন কৃষকের আস্থা। নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী, পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে কয়েকজন নারী-পুরুষের।

কৃষি বিভাগ বলছে, পলিনেট হাউস হচ্ছে পলি ওয়েলপেপার-আবৃত কৃষিঘর। লোহার পাইপ-অ্যাঙ্গেলে কাঠামো তৈরি করা হয়। ঘরের চারপাশ মাটি থেকে তিন ফুট উঁচু করে পলিথিন দিয়ে ঘেরা হয়। মাঝখানে ১০ ফুট ফাঁকা রেখে নেট বসানো হয়। এ নেট ওপরে ওঠানো ও নিচে নামানো যায়। এটি ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং চারাকে রক্ষা করে পোকামাকড় থেকে। ওপরে থাকে পুরু পলিথিনের ছাউনি, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কমায়।

ভেতরে থাকে কালো শেড নেট, যা সূর্যের ৫০ শতাংশ তাপ কমিয়ে দেয়। আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখায় সারা বছরই চারা উৎপাদন সম্ভব হয়। ড্রিপ সেচপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চারার গোড়ায় প্রয়োজনমতো পানি দেওয়া হয়। এ কারণে মাঠের মতো পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না, কীটনাশকের প্রয়োজনও হয় না।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মাঠে বিল্লাল হোসেনের পলিনেট হাউসে উৎপাদিত হচ্ছে সবজির চারা। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলোযশোর শহর থেকে মাগুরা মহাসড়ক ধরে ১৪ কিলোমিটার গেলে ভাটার আমতলা। সেখান থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক পেরিয়ে মির্জাপুর মাঠে পৌঁছালে দূর থেকেই দেখা যায় বিল্লালের বিশাল পলিনেট হাউস। ২০ শতাংশ জমির ওপর তৈরি এ হাউস।

ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় সারি সারি মাটির শয্যা। মাঝে নালা করা। কিছু শয্যায় প্লাস্টিক ট্রে ও কাপে চারা রাখা হয়েছে। নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া ও কেঁচো সার মিশিয়ে কোকোপিট পদ্ধতিতে বীজ বপন করা হয়। এতে মাটি লাগে না, শিকড়ও অক্ষত থাকে।

বিল্লাল বর্তমানে ১৩ প্রজাতির চারা উৎপাদন করেন—টমেটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, চিচিঙ্গা, বরবটি, ধুন্দুল, পেঁয়াজ, শীতকালীন শিম ও ব্রকলি। প্রথমে তিন প্রজাতি দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন তাঁর নার্সারির নাম হয়েছে ‘বিল্লাল নার্সারি’।

দিনমজুর থেকে উদ্যোক্তা

বাঘারপাড়া উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের ছেলে বিল্লাল পঞ্চম শ্রেণির পর অর্থাভাবে পড়াশোনা ছাড়েন। দিনমজুরির কাজ করতেন, কখনো ফসল পাহারা দিতেন, কখনো দোকানে কাজ করতেন ১০ টাকার মজুরিতে। ২০১০ সালে বছরে ৩ হাজার টাকায় জমি বন্ধক নিয়ে বাঁধাকপি চাষ শুরু করেন। বাবার অনুপ্রেরণায় ২০২০ সালে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে ছোট শেড বানিয়ে চারা উৎপাদন শুরু করেন। কিন্তু ঝড়ে শেড ভেঙে যায়। পরে ২০২২ সালে কৃষি বিভাগ ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২০ শতাংশ জমিতে তাঁকে পলিনেট হাউস তৈরি করে দেয়। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তখন থেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

বছরে আয় করেন ৪০ লাখ,দিনমজুর থেকে চারা উৎপাদনে সফল বিল্লাল

প্রকাশের সময় : ১১:৩৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

বিস্তীর্ণ মাঠের এক পাশে সাদা পলিথিনে মোড়ানো উঁচু ঘর। কাঠামো লোহার পাইপ ও অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি। ছাউনি পলিথিনের। ভেতরে সারি সারি মাটির শয্যা, সবুজে ছেয়ে গেছে প্রতিটি শয্যা। নানা ধরনের সবজির চারা সেখানে লকলক করছে।

ঘরটির নাম ‘পলিনেট হাউস’। নেট, পলি ওয়েলপেপার ও লোহার কাঠামোয় তৈরি এ ঘরে সারা বছরই চারা উৎপাদিত হয়। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা যেকোনো মৌসুমে।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মাঠে এই পলিনেট হাউস তৈরি করেছেন বিল্লাল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক। মানসম্মত চারা উৎপাদন করে তিনি এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। অর্জন করেছেন কৃষকের আস্থা। নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী, পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে কয়েকজন নারী-পুরুষের।

কৃষি বিভাগ বলছে, পলিনেট হাউস হচ্ছে পলি ওয়েলপেপার-আবৃত কৃষিঘর। লোহার পাইপ-অ্যাঙ্গেলে কাঠামো তৈরি করা হয়। ঘরের চারপাশ মাটি থেকে তিন ফুট উঁচু করে পলিথিন দিয়ে ঘেরা হয়। মাঝখানে ১০ ফুট ফাঁকা রেখে নেট বসানো হয়। এ নেট ওপরে ওঠানো ও নিচে নামানো যায়। এটি ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং চারাকে রক্ষা করে পোকামাকড় থেকে। ওপরে থাকে পুরু পলিথিনের ছাউনি, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কমায়।

ভেতরে থাকে কালো শেড নেট, যা সূর্যের ৫০ শতাংশ তাপ কমিয়ে দেয়। আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখায় সারা বছরই চারা উৎপাদন সম্ভব হয়। ড্রিপ সেচপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চারার গোড়ায় প্রয়োজনমতো পানি দেওয়া হয়। এ কারণে মাঠের মতো পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না, কীটনাশকের প্রয়োজনও হয় না।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মাঠে বিল্লাল হোসেনের পলিনেট হাউসে উৎপাদিত হচ্ছে সবজির চারা। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলোযশোর শহর থেকে মাগুরা মহাসড়ক ধরে ১৪ কিলোমিটার গেলে ভাটার আমতলা। সেখান থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক পেরিয়ে মির্জাপুর মাঠে পৌঁছালে দূর থেকেই দেখা যায় বিল্লালের বিশাল পলিনেট হাউস। ২০ শতাংশ জমির ওপর তৈরি এ হাউস।

ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় সারি সারি মাটির শয্যা। মাঝে নালা করা। কিছু শয্যায় প্লাস্টিক ট্রে ও কাপে চারা রাখা হয়েছে। নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া ও কেঁচো সার মিশিয়ে কোকোপিট পদ্ধতিতে বীজ বপন করা হয়। এতে মাটি লাগে না, শিকড়ও অক্ষত থাকে।

বিল্লাল বর্তমানে ১৩ প্রজাতির চারা উৎপাদন করেন—টমেটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, চিচিঙ্গা, বরবটি, ধুন্দুল, পেঁয়াজ, শীতকালীন শিম ও ব্রকলি। প্রথমে তিন প্রজাতি দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন তাঁর নার্সারির নাম হয়েছে ‘বিল্লাল নার্সারি’।

দিনমজুর থেকে উদ্যোক্তা

বাঘারপাড়া উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের ছেলে বিল্লাল পঞ্চম শ্রেণির পর অর্থাভাবে পড়াশোনা ছাড়েন। দিনমজুরির কাজ করতেন, কখনো ফসল পাহারা দিতেন, কখনো দোকানে কাজ করতেন ১০ টাকার মজুরিতে। ২০১০ সালে বছরে ৩ হাজার টাকায় জমি বন্ধক নিয়ে বাঁধাকপি চাষ শুরু করেন। বাবার অনুপ্রেরণায় ২০২০ সালে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে ছোট শেড বানিয়ে চারা উৎপাদন শুরু করেন। কিন্তু ঝড়ে শেড ভেঙে যায়। পরে ২০২২ সালে কৃষি বিভাগ ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২০ শতাংশ জমিতে তাঁকে পলিনেট হাউস তৈরি করে দেয়। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তখন থেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করেন।