ঢাকা ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাবার সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা শিশু আয়ানের

ছবি সংগৃহিত

জন্মের পর বাবাকে সামনাসামনি দেখেনি আয়ান। হয়নি তার সঙ্গে খুনসুটিতে মাতা কিংবা আঙুল ছুঁয়ে হাঁটাও। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। একটি দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দিলো। প্রবাসী বাবা ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু নিথর দেহে। বুকের ভেতর জমে থাকা কথা অব্যক্তই রয়ে গেল এক বছর বয়সী আয়ানের। সেগুলো আর কোনদিনও বলা হবে না তার। সেই সঙ্গে বাবা ডাকার আক্ষেপটাও ছোট্ট শিশুটির থেকে যাবে সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাবার সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা হয় আয়ানের। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ওই প্রবাসীকে।হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের ধুলদী জয়পুর ঘষিরডাঙ্গি গ্রামে।

আয়ানের বাবার নাম সানি শেখ (২৮)। তিনি ওই গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে।জানা গেছে, অনাগত সন্তানকে রেখে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সৌদি আরব পাড়ি জমান সানি শেখ। সেখানে দাম্মাম শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে খাবার ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে খাবার ডেলিভারির উদ্দেশ্যে বের হন সানি। পথে দ্রুতগতির বেপরোয়া একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সানি।
এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সানির সেই অনাগত সন্তান আয়নের বয়স এখন এক বছর।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রথমবারের মতো দেখা হয় বাবা-ছেলের। তবে ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দুজনের কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, পারেনি আদরের ছোঁয়া দিতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কান্না, আহাজারি ও বাবা ডাকার আক্ষেপ নিয়ে আয়ানও শেষ বিদায় দিয়েছে বাবাকে।

অন্যদিকে, বাবাকে হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সানির ৪ বছর বয়সী মেয়ে সিনথিয়া। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী আছিয়া বেগম। বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা আনোয়ারা বেগম। আদরের একমাত্র ভাইকে হারিয়ে দুই বোনের আহাজারি কাঁদিয়েছে উপস্থিত সবাইকে। সানিকে শেষ বিদায় জানাতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গ্রামের শত শত মানুষ।

এ বিষয়ে শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন আহমেদ কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, সানি খুব ভালো ছেলে ছিল। দুটি শিশু বাচ্চা রেখে প্রবাসের মাটিতে সে মারা গেল। এতে পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।তিনি আরও বলেন, সানির আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

বাবার সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা শিশু আয়ানের

প্রকাশের সময় : ০২:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি সংগৃহিত

জন্মের পর বাবাকে সামনাসামনি দেখেনি আয়ান। হয়নি তার সঙ্গে খুনসুটিতে মাতা কিংবা আঙুল ছুঁয়ে হাঁটাও। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। একটি দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দিলো। প্রবাসী বাবা ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু নিথর দেহে। বুকের ভেতর জমে থাকা কথা অব্যক্তই রয়ে গেল এক বছর বয়সী আয়ানের। সেগুলো আর কোনদিনও বলা হবে না তার। সেই সঙ্গে বাবা ডাকার আক্ষেপটাও ছোট্ট শিশুটির থেকে যাবে সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাবার সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা হয় আয়ানের। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ওই প্রবাসীকে।হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের ধুলদী জয়পুর ঘষিরডাঙ্গি গ্রামে।

আয়ানের বাবার নাম সানি শেখ (২৮)। তিনি ওই গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে।জানা গেছে, অনাগত সন্তানকে রেখে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সৌদি আরব পাড়ি জমান সানি শেখ। সেখানে দাম্মাম শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে খাবার ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে খাবার ডেলিভারির উদ্দেশ্যে বের হন সানি। পথে দ্রুতগতির বেপরোয়া একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সানি।
এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সানির সেই অনাগত সন্তান আয়নের বয়স এখন এক বছর।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রথমবারের মতো দেখা হয় বাবা-ছেলের। তবে ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দুজনের কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, পারেনি আদরের ছোঁয়া দিতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কান্না, আহাজারি ও বাবা ডাকার আক্ষেপ নিয়ে আয়ানও শেষ বিদায় দিয়েছে বাবাকে।

অন্যদিকে, বাবাকে হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সানির ৪ বছর বয়সী মেয়ে সিনথিয়া। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী আছিয়া বেগম। বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা আনোয়ারা বেগম। আদরের একমাত্র ভাইকে হারিয়ে দুই বোনের আহাজারি কাঁদিয়েছে উপস্থিত সবাইকে। সানিকে শেষ বিদায় জানাতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গ্রামের শত শত মানুষ।

এ বিষয়ে শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন আহমেদ কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, সানি খুব ভালো ছেলে ছিল। দুটি শিশু বাচ্চা রেখে প্রবাসের মাটিতে সে মারা গেল। এতে পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।তিনি আরও বলেন, সানির আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।