১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমার মাধ্যমে বনশ্রীর রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনীত ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠেন বনশ্রী। এরপর শুরু হয় তাঁর ব্যস্ত সময়। একে একে তিনি অভিনয় করেন ৮ থেকে ১০টি ছবিতে। নায়ক মান্না, রুবেল ও আমিন খানের সঙ্গে পর্দা মাতান তিনি। দর্শকেরা তাঁকে গ্রহণ করে নতুন প্রজন্মের নায়িকা হিসেবে। শুটিং সেট, গান, নাচ, ক্যামেরার ঝলকানি—সব মিলিয়ে তখন তাঁর জীবন রঙিন সিনেমার মতোই।
একটা সময় সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দেন বনশ্রী। তারপর শুরু জীবনের নতুন অধ্যায়, যে অধ্যায়ে এসে তিনি পড়েন অর্থকষ্টে। জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে একটা সময় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁইও হারান। বনশ্রী জানান, একসময় শাহবাগে ফুল বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেন। কিন্তু তা দিয়েও পুরোপুরি চলত না সংসার। শেষ পর্যন্ত তাঁকে নামতে হয় বাসে বাসে হকারির মতো কাজেও। সেই জীবনের গল্প এভাবেই বলেছিলেন বনশ্রী, ‘চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে।’
শহুরে জীবনের চড়াই-উতরাই শেষে বনশ্রী ফিরে যান নিজ জেলা মাদারীপুরের শিবচরে। আশ্রয় মেলে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ছোট ঘরে। সরকারি অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা ছিল। একসময়ের নায়িকা তখন গ্রামে একা, খুব সাধারণ এক জীবন যাপন করতেন। খ্যাতি, করতালি, ক্যামেরার ঝলক—সব যেন অতীতের গল্প। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি ছিলেন একসময়ের চলচ্চিত্রের নায়িকা বনশ্রী, কিন্তু তাঁর জীবনের কষ্টে কোনো আলোর রেশ দেখা যেত না।
১৯৭২ সালে শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম বনশ্রীর। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রীনা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।