ঢাকা ০৫:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দুয়ায় ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ কেটে খাল খননের চেষ্টায় চরম উত্তেজনা

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের বীরমাইজহাটি গ্রামে ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ/রাস্তা কেটে জোরপূর্বক খাল খননের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিকে কেন্দ্র করে এ বিরোধের সূত্রপাত হলেও এতে কৃষক ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী গড়াডোবা ইউনিয়নের টাঙ্গুয়া ও আঙ্গারোয়া গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। অপরিকল্পিত বাঁধ ও মাছের ঘের (ফিশারিজ) নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে হাজার হাজার একর আবাদি জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।

এ অবস্থায় গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) সকাল ৮টার দিকে শতশত মানুষ দুটি বেকু মেশিন ব্যবহার করে বীরমাইজহাটি গ্রামের মধ্য দিয়ে জোরপূর্বক খাল খনন শুরু করে। এতে গ্রামের ১৮ জন কৃষকের রেকর্ডভুক্ত আবাদি জমি ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয়রা বাধা প্রদান করে।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বৈধ প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠান। এ সময় তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি ফিজিবিলিটি রিপোর্ট প্রণয়নের আশ্বাস দেন।

তবে খাল খননের উদ্যোগীরা ইউএনওর অনুরোধ উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে বিকেল ৪টার দিকে মদন সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার এর নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে খনন কার্যক্রম বন্ধ হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

গন্ডা ইউনিয়নের বীরমাইজহাটি গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হালিম (খোকন) অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের মালিকানাধীন কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট জবরদখল করে প্রতিপক্ষ অবৈধভাবে খাল খননের চেষ্টা করছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই আদালতে বিচারাধীন (মোকদ্দমা নং–১৮/২০২৫)। তবুও তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ জোরপূর্বক খনন কাজ চালাচ্ছিল।” স্থানীয়রা জানান, জনসংখ্যায় ছোট হওয়ায় মাইজহাটি গ্রাম বারবার প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে।

বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে গন্ডা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জুর রহমানের আমলে শিবপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে সরকারি হালট বরাবর প্রায় ১২০০ মিটার দীর্ঘ একটি ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু সরকারি হালট বেদখল হয়ে যাওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ইমদাদুল হক বলেন,  এ বিষয়টি আমরা সামাজিকভাবে মিমাংসা করার চেস্টা করছি। আশা করি আইনগত সকল দিক ঠিক রেখে বিষয়টির সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

কেন্দুয়ায় ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ কেটে খাল খননের চেষ্টায় চরম উত্তেজনা

প্রকাশের সময় : ০৫:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের বীরমাইজহাটি গ্রামে ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ/রাস্তা কেটে জোরপূর্বক খাল খননের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিকে কেন্দ্র করে এ বিরোধের সূত্রপাত হলেও এতে কৃষক ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী গড়াডোবা ইউনিয়নের টাঙ্গুয়া ও আঙ্গারোয়া গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। অপরিকল্পিত বাঁধ ও মাছের ঘের (ফিশারিজ) নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে হাজার হাজার একর আবাদি জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।

এ অবস্থায় গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) সকাল ৮টার দিকে শতশত মানুষ দুটি বেকু মেশিন ব্যবহার করে বীরমাইজহাটি গ্রামের মধ্য দিয়ে জোরপূর্বক খাল খনন শুরু করে। এতে গ্রামের ১৮ জন কৃষকের রেকর্ডভুক্ত আবাদি জমি ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয়রা বাধা প্রদান করে।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বৈধ প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠান। এ সময় তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি ফিজিবিলিটি রিপোর্ট প্রণয়নের আশ্বাস দেন।

তবে খাল খননের উদ্যোগীরা ইউএনওর অনুরোধ উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে বিকেল ৪টার দিকে মদন সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জ ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার এর নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে খনন কার্যক্রম বন্ধ হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

গন্ডা ইউনিয়নের বীরমাইজহাটি গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হালিম (খোকন) অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের মালিকানাধীন কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট জবরদখল করে প্রতিপক্ষ অবৈধভাবে খাল খননের চেষ্টা করছে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই আদালতে বিচারাধীন (মোকদ্দমা নং–১৮/২০২৫)। তবুও তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ জোরপূর্বক খনন কাজ চালাচ্ছিল।” স্থানীয়রা জানান, জনসংখ্যায় ছোট হওয়ায় মাইজহাটি গ্রাম বারবার প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে।

বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে গন্ডা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জুর রহমানের আমলে শিবপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে সরকারি হালট বরাবর প্রায় ১২০০ মিটার দীর্ঘ একটি ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু সরকারি হালট বেদখল হয়ে যাওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ইমদাদুল হক বলেন,  এ বিষয়টি আমরা সামাজিকভাবে মিমাংসা করার চেস্টা করছি। আশা করি আইনগত সকল দিক ঠিক রেখে বিষয়টির সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছি।