
খুলনার রূপসায় কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৬ টাকা লুটের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক হোতা ইউনূস শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার কাছ থেকে চুরির দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ইউনূস উপজেলার নিকলাপুর গ্রামের ইনছান শেখের ছেলে।
রোববার ভোররাতে তাকে রূপসা কৃষি ব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল ইউনূস শেখকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘এ’ সার্কেল মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ইউনূসকে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছে।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার ইউনূস শেখ কৃষি ব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। এছাড়া একই ভবনের নিচতলায় তার একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ইউনূস পেশায় একজন লেদ মিস্ত্রি, ট্রাকের যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতেন। লোহা কাটার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই তিনি ব্যাংকের ভল্ট ও তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। শুক্রবার ভোরে ব্যাংকে কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের পরিবারের জিম্মায় দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষি ব্যাংক পূর্ব রূপসা ঘাট শাখার ৬টি তালাসহ ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুট হওয়ার ঘটনায় ইউনূসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আরও তথ্য জানা এবং লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ইউনূস শেখের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ইউনুস মোটা অংকের ঋণের টাকার চাপে ছিলেন। ইতিমধ্যে চুরি করা টাকা থেকে কিছু ঋণ পরিশোধও করেছেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, এই চুরির ঘটনাটি ইউনূস একাই ঘটিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ই আগস্ট রাত ১০টার দিকে ব্যাংক নিরাপত্তা প্রহরী ব্যাংকে এসে দেখেন মেইন গেটের তালা ভাঙা, এমন অবস্থা দেখে নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পুলিশের উপস্থিতিতে লেজার ও ক্যাশ মিলিয়ে দেখেন ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৬ টাকা নেই।
এ ঘটনায় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকালে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রূপসা থানায় মামলা করেন। এদিকে ব্যাংক লুটের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ রোববার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিভাগীয় অফিসের ডিজিএম আসলাম হোসেন, এজিএম মশিউর রহমান ও এজিএম হামিম শেখ। কৃষি ব্যাংক খুলনার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।