ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পটুয়াখালীতে জুলাই শহীদ যোদ্ধার তালিকায় ভূয়া নাম অন্তর্ভুক্ত ; অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে  পারিবারিক দ্বন্দ

পটুয়াখালীতে জুলাই শহীদ যোদ্ধার তালিকায় ভূয়া নাম অন্তর্ভুক্ত ; অনুদানের অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে  পারিবারিক দ্বন্দে প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হপটুয়াখালী প্রতিনিধি জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত না থাকা সত্তে¡ও জুলাইয়ের শহীদ যোদ্ধার তালিকায় পটুয়াখালীর খলিসাখালী গ্রামের মৃত বশির সরদারেরর নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

শহীদদের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানের টাকা ভাগভাগি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং জানা যায় প্রকৃত ঘটনা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালি গ্রামের  সেকান্দার আলী সরদারের কনিষ্ঠ পুত্র বশির সরদার (৪০)। শহরের পৌর নিউমার্কেট এলাকায় চা-পান বিক্রেতা করতেন তিনি।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে গুরুত্ব জখম হয় সে এবং এ কারণে ১৫ নভেম্বর মারা যান বশির। কিন্তু বশিরের পরিবার অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত দেখিয়ে ঢাকায় চিকিৎসার সুবিধা নেয় এবং শহীদের তালিকার তাঁর (বশির) নাম অন্তর্ভূক্ত কারানো হয়। পরবর্তীতে বশিরের পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে ২ লাখ এবং সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু বশিরের নাম অনুদানের অর্থ ভাগাবাটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। বশিরের বড় ভাই মো. নাসির সরদার বশিরের সরদারের মারা যাওয়ার প্রকৃত ঘটনা তুলে গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়।

  এদিকে অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন শহীদদের  তালিকা থেকে বশির সরদারের নাম বাতিল করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিতের এবং প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর চিঠি পাঠান। বশিরের বড় ভাই মো. নাসির সরদার বলেন, ‘আমার ছোট ভাই বশির সরদার জুলাই যোদ্ধা নয় এবং সে জুলাই-আগস্টছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণ করেনি।

সে লোহার আঘাতে আহত হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই সরকারি অনুদান পেতে শহীদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করানো হয়। পরবর্তীতে আমি আমার নিজের অপরাধবোধ বুঝতে পরি। তাই প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করি’।   বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন,‘ পায়ে লোহা ঢুকার কারণে আমার স্বামীর পায়ে পচন ধরে যায়। তাঁর চিকিৎসা করাতে অনেক ধারদেনা ও ঋণ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাকে বাঁচাতে পারিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি।

পরে ভাসুরের (নাসির সরদার) প্ররাচণায় সরকারি অনুদান পেতে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় আমার স্বামীর নাম অর্র্ন্তভুক্ত করি। কিন্তু এক পর্যায় অনুদানের একটি বড় অংশ দাবি করেন বশিরের বাবা-মা ও ভাই। তাঁদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন’। বশিরের বৃদ্ধ বাবা সেকান্দার সরদার বলেন, ‘ছোট ছেলে বশির নামে সরকারের দেয়া অনুদানের ১২ লাখ বশিরের স্ত্রী একাই ভোগ করছেন।

যে কারণে তাঁর বড় ছেলে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে সত্য ঘটনা প্রকাশ করে দেন’। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, বশিরের স্ত্রী, বাবা ও ভাই সবাই স্বীকার করেছে শহীদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি ভুয়া। তাই জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

পটুয়াখালীতে জুলাই শহীদ যোদ্ধার তালিকায় ভূয়া নাম অন্তর্ভুক্ত ; অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে  পারিবারিক দ্বন্দ

প্রকাশের সময় : ১২:২০:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালীতে জুলাই শহীদ যোদ্ধার তালিকায় ভূয়া নাম অন্তর্ভুক্ত ; অনুদানের অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে  পারিবারিক দ্বন্দে প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হপটুয়াখালী প্রতিনিধি জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত না থাকা সত্তে¡ও জুলাইয়ের শহীদ যোদ্ধার তালিকায় পটুয়াখালীর খলিসাখালী গ্রামের মৃত বশির সরদারেরর নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

শহীদদের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানের টাকা ভাগভাগি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং জানা যায় প্রকৃত ঘটনা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালি গ্রামের  সেকান্দার আলী সরদারের কনিষ্ঠ পুত্র বশির সরদার (৪০)। শহরের পৌর নিউমার্কেট এলাকায় চা-পান বিক্রেতা করতেন তিনি।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে গুরুত্ব জখম হয় সে এবং এ কারণে ১৫ নভেম্বর মারা যান বশির। কিন্তু বশিরের পরিবার অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত দেখিয়ে ঢাকায় চিকিৎসার সুবিধা নেয় এবং শহীদের তালিকার তাঁর (বশির) নাম অন্তর্ভূক্ত কারানো হয়। পরবর্তীতে বশিরের পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে ২ লাখ এবং সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু বশিরের নাম অনুদানের অর্থ ভাগাবাটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। বশিরের বড় ভাই মো. নাসির সরদার বশিরের সরদারের মারা যাওয়ার প্রকৃত ঘটনা তুলে গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়।

  এদিকে অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন শহীদদের  তালিকা থেকে বশির সরদারের নাম বাতিল করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিতের এবং প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর চিঠি পাঠান। বশিরের বড় ভাই মো. নাসির সরদার বলেন, ‘আমার ছোট ভাই বশির সরদার জুলাই যোদ্ধা নয় এবং সে জুলাই-আগস্টছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণ করেনি।

সে লোহার আঘাতে আহত হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই সরকারি অনুদান পেতে শহীদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করানো হয়। পরবর্তীতে আমি আমার নিজের অপরাধবোধ বুঝতে পরি। তাই প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করি’।   বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন,‘ পায়ে লোহা ঢুকার কারণে আমার স্বামীর পায়ে পচন ধরে যায়। তাঁর চিকিৎসা করাতে অনেক ধারদেনা ও ঋণ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাকে বাঁচাতে পারিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরে দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি।

পরে ভাসুরের (নাসির সরদার) প্ররাচণায় সরকারি অনুদান পেতে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় আমার স্বামীর নাম অর্র্ন্তভুক্ত করি। কিন্তু এক পর্যায় অনুদানের একটি বড় অংশ দাবি করেন বশিরের বাবা-মা ও ভাই। তাঁদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন’। বশিরের বৃদ্ধ বাবা সেকান্দার সরদার বলেন, ‘ছোট ছেলে বশির নামে সরকারের দেয়া অনুদানের ১২ লাখ বশিরের স্ত্রী একাই ভোগ করছেন।

যে কারণে তাঁর বড় ছেলে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে সত্য ঘটনা প্রকাশ করে দেন’। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, বশিরের স্ত্রী, বাবা ও ভাই সবাই স্বীকার করেছে শহীদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি ভুয়া। তাই জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশন করে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।