ঢাকা ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোণার আটপাড়ায় স্কুলে ঢুকে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ছাত্রদল-যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

নেত্রকোনার আটপাড়ায় স্কুলের ভেতরে ঢুকে একজন প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ১টায় উপজেলার অভয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে তারা মারধর করেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন আগে যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে শোকজ করেন। এ শোকজপত্র শিক্ষিকা রুবি আক্তার বাড়িতে নিলে তার স্বামী কামাল কাগজটি দেখে বিষয়টি যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টারকে জানায়।

পরে বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও উপজেলা ছাত্রদল সদস্য মুন্না খান শাহীন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষককে প্রথমে ‘নারীদের ইভটিজিং’ করার অভিযোগে হেনস্তা করেন।


একপর্যায়ে শাহীন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। প্রধান শিক্ষক উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা বাধা দিয়ে পাঞ্জাবির কলার ধরে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী তাসলিমা কোহেন (সহকারী শিক্ষক, ছয়াশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে চড় মারেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করি। সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার নিয়মিত স্কুলে দেরি করে আসছিলেন বলে তাকে নিয়ম মাফিক শোকজ করা হয়। এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। বুধবার স্কুল চলাকালীন হঠাৎ হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও মুন্না খান শাহীন স্কুলে এসে আমাকে উল্টো ‘নারী শিক্ষকদের ইভটিজিং’ এর মতো মিথ্যা অভিযোগে অপমান করে। আমি যখন বিষয়টি ভিডিও করতে চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে কলার ধরে বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মুন্না খান শাহীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপর অভিযুক্ত যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, রুবি আক্তার আমার চাচি। প্রধান শিক্ষক বেশ কিছুদিন ধরে তাকে অশালীন প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। আমি এ বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং এর আগেও ওই শিক্ষক অন্য এক নারী সহকর্মীকেও কুপ্রস্তাব দিয়ে হয়রানি করেছিলেন, যা পরে মীমাংসা করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আহসান উল্লাহ মুকুল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় দেখেছি। মারধরের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও শিক্ষক রুবিকে শোকজ করা হয়েছিল, সেটি জানি। তবে কোনো নারী শিক্ষক আমার কাছে শ্লীলতাহানির বা কুপ্রস্তাবের লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।

আটপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শুনেছি প্রধান শিক্ষককে দু’জন ব্যক্তি মারধর করেছে। এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

নেত্রকোণার আটপাড়ায় স্কুলে ঢুকে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ছাত্রদল-যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

প্রকাশের সময় : ১১:০৮:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

নেত্রকোনার আটপাড়ায় স্কুলের ভেতরে ঢুকে একজন প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ১টায় উপজেলার অভয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে তারা মারধর করেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন আগে যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে শোকজ করেন। এ শোকজপত্র শিক্ষিকা রুবি আক্তার বাড়িতে নিলে তার স্বামী কামাল কাগজটি দেখে বিষয়টি যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টারকে জানায়।

পরে বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও উপজেলা ছাত্রদল সদস্য মুন্না খান শাহীন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষককে প্রথমে ‘নারীদের ইভটিজিং’ করার অভিযোগে হেনস্তা করেন।


একপর্যায়ে শাহীন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। প্রধান শিক্ষক উক্ত ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা বাধা দিয়ে পাঞ্জাবির কলার ধরে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী তাসলিমা কোহেন (সহকারী শিক্ষক, ছয়াশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে চড় মারেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করি। সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার নিয়মিত স্কুলে দেরি করে আসছিলেন বলে তাকে নিয়ম মাফিক শোকজ করা হয়। এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। বুধবার স্কুল চলাকালীন হঠাৎ হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও মুন্না খান শাহীন স্কুলে এসে আমাকে উল্টো ‘নারী শিক্ষকদের ইভটিজিং’ এর মতো মিথ্যা অভিযোগে অপমান করে। আমি যখন বিষয়টি ভিডিও করতে চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে কলার ধরে বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মুন্না খান শাহীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপর অভিযুক্ত যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, রুবি আক্তার আমার চাচি। প্রধান শিক্ষক বেশ কিছুদিন ধরে তাকে অশালীন প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। আমি এ বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং এর আগেও ওই শিক্ষক অন্য এক নারী সহকর্মীকেও কুপ্রস্তাব দিয়ে হয়রানি করেছিলেন, যা পরে মীমাংসা করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আহসান উল্লাহ মুকুল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় দেখেছি। মারধরের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও শিক্ষক রুবিকে শোকজ করা হয়েছিল, সেটি জানি। তবে কোনো নারী শিক্ষক আমার কাছে শ্লীলতাহানির বা কুপ্রস্তাবের লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।

আটপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শুনেছি প্রধান শিক্ষককে দু’জন ব্যক্তি মারধর করেছে। এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।