ঢাকা ১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলাফল নিয়ে হতাশা ও প্রশ্ন

 জুলাই ২০২৫ নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় আশঙ্কাজনকভাবে কম পাসের হার অর্জন করেছে। মাত্র ১২.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা বিদ্যালয়ের ইতিহাসে অন্যতম নিম্ন ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ অবস্থাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকাবাসী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও উদ্বেগ। একমাত্র প্রধান শিক্ষক কিংবা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষক নয়, ফলাফলের এই ব্যর্থতার দায় কোথায়—তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকেই মনে করছেন, এটি কেবল বিদ্যালয়ের সমস্যা নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয় ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের অভাব।

বিদ্যালয়ের একদম পাশে অবস্থিত বাজারটি শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে রয়েছে ক্যারমবোর্ড, লুডু, ভিডিও গেমসসহ নানা রকম সময় নষ্টের মাধ্যম। এসব দোকানে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ, নেই কোনো তদারকি। দুপুরের পর অনেক শিক্ষার্থীর বাজারে অযথা ঘোরাফেরা ও মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা দৃষ্টিকটু পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন একদিকে যেমন শিক্ষার সহায়ক হতে পারত, অন্যদিকে তার অসচেতন ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অনেক শিক্ষার্থীকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। গেম, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনটেন্টে ডুবে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, “আমরা সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিই ঠিকই, কিন্তু তারা তা কীভাবে ব্যবহার করছে, সেটা দেখি না। শিক্ষক তো ক্লাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, ঘরের দায়িত্ব অভিভাবককে নিতে হবে।

বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকলেও মানসিক অনুপ্রেরণা, নিয়মিত মনিটরিং এবং শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন এবং স্থানীয় সমাজপতিরা কেউই এই দায় এড়াতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন মহল বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ।

তাঁদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী করণীয় কিছু বিষয় হলো –বিদ্যালয়ের আশপাশে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, বাজার এলাকার খেলার দোকান ও গেম সেন্টারগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা, শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনাল ক্লাস চালু করা, অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন, বিদ্যালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা সাবেক এক শিক্ষক বলেন, “সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের কারখানা।

এখানে যারা লেখাপড়া করে, তারা শুধু নিজেদের নয়, সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎও গড়ে তোলে।” এই প্রতিষ্ঠান যদি বর্তমানে একটি কঠিন সময় পার করে, তাহলে তাকে অবহেলার নয়, দায়িত্বের চোখে দেখতে হবে। সমালোচনা নয়—চাই সহযোগিতার হাত। অবহেলা নয়—চাই ভালোবাসা, চাই সম্মিলিত চেতনা। সবাই মিলে এগিয়ে এলে, ইনশাআল্লাহ, সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় আবারও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস গড়ে তুলবে—এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলাফল নিয়ে হতাশা ও প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৭:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

 জুলাই ২০২৫ নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় আশঙ্কাজনকভাবে কম পাসের হার অর্জন করেছে। মাত্র ১২.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা বিদ্যালয়ের ইতিহাসে অন্যতম নিম্ন ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ অবস্থাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকাবাসী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও উদ্বেগ। একমাত্র প্রধান শিক্ষক কিংবা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষক নয়, ফলাফলের এই ব্যর্থতার দায় কোথায়—তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকেই মনে করছেন, এটি কেবল বিদ্যালয়ের সমস্যা নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয় ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের অভাব।

বিদ্যালয়ের একদম পাশে অবস্থিত বাজারটি শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে রয়েছে ক্যারমবোর্ড, লুডু, ভিডিও গেমসসহ নানা রকম সময় নষ্টের মাধ্যম। এসব দোকানে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ, নেই কোনো তদারকি। দুপুরের পর অনেক শিক্ষার্থীর বাজারে অযথা ঘোরাফেরা ও মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা দৃষ্টিকটু পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন একদিকে যেমন শিক্ষার সহায়ক হতে পারত, অন্যদিকে তার অসচেতন ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অনেক শিক্ষার্থীকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। গেম, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনটেন্টে ডুবে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, “আমরা সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিই ঠিকই, কিন্তু তারা তা কীভাবে ব্যবহার করছে, সেটা দেখি না। শিক্ষক তো ক্লাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, ঘরের দায়িত্ব অভিভাবককে নিতে হবে।

বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকলেও মানসিক অনুপ্রেরণা, নিয়মিত মনিটরিং এবং শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন এবং স্থানীয় সমাজপতিরা কেউই এই দায় এড়াতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন মহল বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ।

তাঁদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী করণীয় কিছু বিষয় হলো –বিদ্যালয়ের আশপাশে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, বাজার এলাকার খেলার দোকান ও গেম সেন্টারগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা, শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনাল ক্লাস চালু করা, অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন, বিদ্যালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার কমিটির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা সাবেক এক শিক্ষক বলেন, “সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের কারখানা।

এখানে যারা লেখাপড়া করে, তারা শুধু নিজেদের নয়, সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎও গড়ে তোলে।” এই প্রতিষ্ঠান যদি বর্তমানে একটি কঠিন সময় পার করে, তাহলে তাকে অবহেলার নয়, দায়িত্বের চোখে দেখতে হবে। সমালোচনা নয়—চাই সহযোগিতার হাত। অবহেলা নয়—চাই ভালোবাসা, চাই সম্মিলিত চেতনা। সবাই মিলে এগিয়ে এলে, ইনশাআল্লাহ, সাজিউড়া উচ্চ বিদ্যালয় আবারও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস গড়ে তুলবে—এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।