ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. ইমদাদুল হক তালুকদার: প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ও গবেষণায় সময়ের সাহসী মুখ

ড. ইমদাদুল হক তালুকদার: প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ও গবেষণায় সময়ের সাহসী মুখ একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন নিবেদিত গবেষক এবং একজন মননশীল উন্নয়নকর্মী এই তিনটি পরিচয়েই সমানভাবে উজ্জ্বল ড. ইমদাদুল হক তালুকদার।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তরে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য অর্থায়ন, লিঙ্গ সংবেদনশীল শাসনব্যবস্থা এবং আচরণবিজ্ঞানের মতো সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্রে তিনি রেখে চলেছেন স্পষ্ট ও শক্তিশালী অবদান।

ড. তালুকদারের শিক্ষাজীবন এক কথায় অনন্য। তিনি ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ইউরোপের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আবো একাডেমি বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড থেকে। তার গবেষণার বিষয় ছিল- “বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ” যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এই গবেষণাকাজে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক কারিন অস্টারম্যান এবং অধ্যাপক কাই বিয়োকভিস্ট।

পিএইচডি’র পূর্বে তিনি সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে অর্জন করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি, নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি। এই ডিগ্রিটি তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশ সরকারের “প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপ” এর আওতায়, যা সরকারের উদ্ভাবনী ইউনিট (Government Innovation Unit) প্রদত্ত একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও সম্মানজনক ফেলোশিপ। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দায়িত্বশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও মানবিক প্রশাসনের মডেল ইতোমধ্যেই স্থানীয় জনগণের মাঝে প্রশংসিত হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা তাঁকে দেশের বাস্তবতা, নীতিনির্ধারকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং জনগণের প্রয়োজনের একটি কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করতে সক্ষম করেছে।

ড. তালুকদারের পেশাগত অভিজ্ঞতা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: সেভ দ্য চিলড্রেন (UK)–এ কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্ম, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (SOAS)–এ গবেষণা সহকারী, এবং ব্র্যাকের ওয়াশ (WASH) প্রোগ্রাম–এ ইন্টার্নশিপ, যেখানে তিনি স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও সামাজিক আচরণ পরিবর্তনমূলক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যে ভরপুর। তিনি কাজ করছেন—জনস্বাস্থ্য ও জনমানসিক স্বাস্থ্য,স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও ব্যয়-কার্যকারিতা বিশ্লেষণ,নারী ও লিঙ্গ-সংশ্লিষ্ট শাসনব্যবস্থা,আচরণবিজ্ঞান ও সামাজিক মনোবিজ্ঞান নিয়ে।বর্তমানে তিনি জনমানসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য অর্থায়ন বিষয়ে একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র রচনায় নিয়োজিত।

এ ছাড়া, তিনি অংশ নিয়েছেন জাপানে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে, যেখানে তিনি নিজের গবেষণা উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই অর্জন দেশের জন্য গৌরবের এবং গবেষণাক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গবেষণায় তাঁর অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে ২০১৬ সালে, যখন তিনি আন্তর্জাতিক আগ্রাসন গবেষণা সংস্থা (ISRA) কর্তৃক Young Investigators Award লাভ করেন। এই পুরস্কার তিনি গ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত ISRA World Meeting-এ।

এই সম্মাননা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং তা বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের বার্তা। ড. ইমদাদুল হক তালুকদার আমাদের জানান দেন, প্রশাসনের চৌকাঠে থেকেও কিভাবে জ্ঞানচর্চা, নীতিমালা ও মানবিক চিন্তার বিকাশ ঘটানো যায়। তার পথচলা আমাদের শেখায় যে, উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোতে নয়, মানুষের চিন্তায়, নীতিতে ও জ্ঞানে নিহিত। তাঁর জীবনকর্ম বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণ প্রশাসক, গবেষক ও নীতি-প্রণেতাদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

একাধারে একজন দায়িত্ববান সরকার কর্মকর্তা এবং গভীর মননের গবেষক হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন এক অনন্য মর্যাদায়। ড. তালুকদারের মতো ব্যক্তিত্বরা আমাদের মনে করিয়ে দেন, উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো মানুষ—যার মধ্যে একসাথে থাকে দেশপ্রেম, দক্ষতা, মানবিকতা ও জ্ঞানচর্চার অঙ্গীকার। তাঁর গল্প শুধু সংবাদ নয়, এক অনুপ্রেরণার আলো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Gojnobi biplob

Popular Post

মাহিন হত্যা মামলায় আরো এক আসামি গ্রেফতার হলো ফটিকছড়িতে

ড. ইমদাদুল হক তালুকদার: প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ও গবেষণায় সময়ের সাহসী মুখ

প্রকাশের সময় : ০৪:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

ড. ইমদাদুল হক তালুকদার: প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ও গবেষণায় সময়ের সাহসী মুখ একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন নিবেদিত গবেষক এবং একজন মননশীল উন্নয়নকর্মী এই তিনটি পরিচয়েই সমানভাবে উজ্জ্বল ড. ইমদাদুল হক তালুকদার।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ স্তরে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য অর্থায়ন, লিঙ্গ সংবেদনশীল শাসনব্যবস্থা এবং আচরণবিজ্ঞানের মতো সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্রে তিনি রেখে চলেছেন স্পষ্ট ও শক্তিশালী অবদান।

ড. তালুকদারের শিক্ষাজীবন এক কথায় অনন্য। তিনি ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ইউরোপের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আবো একাডেমি বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড থেকে। তার গবেষণার বিষয় ছিল- “বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ” যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এই গবেষণাকাজে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক কারিন অস্টারম্যান এবং অধ্যাপক কাই বিয়োকভিস্ট।

পিএইচডি’র পূর্বে তিনি সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে অর্জন করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি, নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি। এই ডিগ্রিটি তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশ সরকারের “প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপ” এর আওতায়, যা সরকারের উদ্ভাবনী ইউনিট (Government Innovation Unit) প্রদত্ত একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও সম্মানজনক ফেলোশিপ। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দায়িত্বশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও মানবিক প্রশাসনের মডেল ইতোমধ্যেই স্থানীয় জনগণের মাঝে প্রশংসিত হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা তাঁকে দেশের বাস্তবতা, নীতিনির্ধারকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং জনগণের প্রয়োজনের একটি কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করতে সক্ষম করেছে।

ড. তালুকদারের পেশাগত অভিজ্ঞতা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: সেভ দ্য চিলড্রেন (UK)–এ কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্ম, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (SOAS)–এ গবেষণা সহকারী, এবং ব্র্যাকের ওয়াশ (WASH) প্রোগ্রাম–এ ইন্টার্নশিপ, যেখানে তিনি স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও সামাজিক আচরণ পরিবর্তনমূলক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যে ভরপুর। তিনি কাজ করছেন—জনস্বাস্থ্য ও জনমানসিক স্বাস্থ্য,স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও ব্যয়-কার্যকারিতা বিশ্লেষণ,নারী ও লিঙ্গ-সংশ্লিষ্ট শাসনব্যবস্থা,আচরণবিজ্ঞান ও সামাজিক মনোবিজ্ঞান নিয়ে।বর্তমানে তিনি জনমানসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য অর্থায়ন বিষয়ে একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র রচনায় নিয়োজিত।

এ ছাড়া, তিনি অংশ নিয়েছেন জাপানে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে, যেখানে তিনি নিজের গবেষণা উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই অর্জন দেশের জন্য গৌরবের এবং গবেষণাক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গবেষণায় তাঁর অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে ২০১৬ সালে, যখন তিনি আন্তর্জাতিক আগ্রাসন গবেষণা সংস্থা (ISRA) কর্তৃক Young Investigators Award লাভ করেন। এই পুরস্কার তিনি গ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত ISRA World Meeting-এ।

এই সম্মাননা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং তা বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের বার্তা। ড. ইমদাদুল হক তালুকদার আমাদের জানান দেন, প্রশাসনের চৌকাঠে থেকেও কিভাবে জ্ঞানচর্চা, নীতিমালা ও মানবিক চিন্তার বিকাশ ঘটানো যায়। তার পথচলা আমাদের শেখায় যে, উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোতে নয়, মানুষের চিন্তায়, নীতিতে ও জ্ঞানে নিহিত। তাঁর জীবনকর্ম বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণ প্রশাসক, গবেষক ও নীতি-প্রণেতাদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

একাধারে একজন দায়িত্ববান সরকার কর্মকর্তা এবং গভীর মননের গবেষক হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন এক অনন্য মর্যাদায়। ড. তালুকদারের মতো ব্যক্তিত্বরা আমাদের মনে করিয়ে দেন, উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো মানুষ—যার মধ্যে একসাথে থাকে দেশপ্রেম, দক্ষতা, মানবিকতা ও জ্ঞানচর্চার অঙ্গীকার। তাঁর গল্প শুধু সংবাদ নয়, এক অনুপ্রেরণার আলো।