ছবি সংগৃহিত
কলেজটি বাইরে থেকে দেশের আর ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই সাদামাটা। কে বলবে, এই কলেজের এক বিভাগ থেকেই বৃত্তিসহ বিদেশে পড়তে গেছেন শতাধিক শিক্ষার্থী!
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগ থেকে গত এক দশকে স্নাতক করেছেন পাঁচ শর বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এক শর বেশি তরুণ পূর্ণবৃত্তি (ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ) নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ইউরোপের তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ ‘ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ’ তালিকায় নাম ওঠানোও এই কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রায় ‘নিয়মিত’ ঘটনা!যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেইনের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণবৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন সাইদুর রহমান। এই ব্যাচেরই ১২ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে আছেন।
কীভাবে সম্ভব হলো? সাইদুর বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের সহযোগিতাই আমাদের সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি। কলেজের আলফা সায়েন্স ল্যাবে সিনিয়রদের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রোবোটিকস প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছি।
এসবই আমার জ্ঞান ও সিভিকে সমৃদ্ধ করেছে। সহপাঠীদের সহযোগিতা ও দলগত কাজ আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে সময়মতো সুপারিশপত্র ও আবেদনসংক্রান্ত সহায়তা পেয়েছি। বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সবকিছুই আসলে সাহায্য করেছে।’যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেইনের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণবৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন সাইদুর রহমানছবি: সাইদুরের সৌজন্যেশিক্ষার্থীদের এই পথচলার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে দেন শিক্ষকেরা।
বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক এস এম আনোয়ারুল হকের কথায় সেই চিত্রই ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়। তা ছাড়া আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো সম্মেলন বা জার্নালে থিসিস পেপার প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
ফলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করেন, আন্তর্জাতিক স্কলারশিপের জন্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে।’ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করছেন ইমরান হোসেনছবি: ইমরানের সৌজন্যবাইরে থেকে দেখলে এই সাফল্যের পথ যতটা মসৃণ মনে হয়, ভেতরের চিত্রটা কিন্তু সব সময় তেমন না। শিক্ষকের অভাব, অপর্যাপ্ত লোকবল আর সীমিত ল্যাব সুবিধা—এসব চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেই পড়াশোনা করেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরে ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করছেন ইমরান হোসেন। তিনিও ছিলেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র।
বললেন, ‘যদিও আমাদের বিভাগে শিক্ষক, লোকবল, আধুনিক ল্যাবের অভাব আছে, তবু শিক্ষার্থীদের উদ্যমের অভাব নেই। তা ছাড়া সবার সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। শেখার প্রতি আগ্রহ, দলগত কাজের মনোভাব এবং সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতাই বিভাগের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই দিকগুলো শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা ও উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানিবুল আলম বর্তমানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও একজন ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলার। তিনি বললেন, ‘এই কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তো আদতে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্তের সন্তানেরা নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বড় স্বপ্ন দেখতে শেখে।
সেই স্বপ্নের স্পর্ধাই তাদের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস গঠনে ও এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও এই মানসিক শক্তিই তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা।’ কলেজের বিশেষ ভূমিকার কথাও উল্লেখ করলেন তিনি, ‘আমাদের ইইই বিভাগের শিক্ষকেরা শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়; সমস্যা সমাধান, গবেষণামূলক চিন্তাভাবনা এবং বাস্তব প্রয়োগের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। স্নাতকের পাঠ্যক্রম শক্তিশালী ভিত্তি গঠনে সাহায্য করেছে, যা পরে উচ্চশিক্ষা বা গবেষণায় অগ্রসর হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে আধুনিক শিল্প খাত ও গবেষণার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যক্রম আরও আধুনিকায়ন করা হলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আরও এগিয়ে যেতে পারবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক:- গজনবী বিপ্লব
নেত্রকোণা অফিস:- গজনবী ভিলা, সাতবেরিকান্দা, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা