মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে একসময় মনে হতো—এ যেন ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। শরীয়া আইন সেখানে কঠোরভাবে বাস্তবায়িত, সমাজজীবনে ধর্মের প্রভাব সুস্পষ্ট।
কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। সৌদি আরবসহ বহু দেশে আজ ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা ক্রমেই কমে আসছে; ধর্মীয়তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। অন্যদিকে সমাজে বাড়ছে ভোগবিলাস, সাংস্কৃতিক বিপথগামিতা ও নৈতিক অবক্ষয়। অপরদিকে ইউরোপ ও আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র।
সেখানে রাষ্ট্র সেক্যুলার, সমাজে নাস্তিক ও অবিশ্বাসীর সংখ্যাও প্রচুর। তবু আশ্চর্যজনকভাবে, ইসলামই সেখানে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। যুক্তি, চিন্তা ও আত্মজিজ্ঞাসা থেকেই অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে—প্রথা নয়, বোধের তাগিদে।
এই বৈপরীত্য প্রশ্ন জাগায়—কেন যেখানে শরীয়া আছে, সেখানে ধর্মীয় চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে? আর যেখানে সেক্যুলার জীবনধারা, সেখানে কেন ইসলামের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে? বাংলাদেশের অবস্থাটা যেন আরও জটিল।
এখানে না শরীয়া আইন আছে, না পূর্ণ সেক্যুলার কাঠামো। আমরা মাঝামাঝি এক অস্থির তন্ত্রে বাস করছি—যেখানে নিয়মের চেয়ে অনিয়ম, নীতির চেয়ে দুর্নীতি, মানবতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যই বড়। ধর্মের নামে বিভাজন, রাজনীতির নামে প্রতিহিংসা—সব মিলিয়ে সমাজে নৈতিক শূন্যতা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। আমাদের সমাজে ধর্মীয় বক্তৃতা বাড়ছে, কিন্তু ধর্মীয় চর্চা কমছে।
ন্যায়ের স্লোগান জোরালো হচ্ছে, কিন্তু অন্যায় আরও সংগঠিত হচ্ছে। মনে হয়, এ দেশ যেন এক অদ্ভুত চক্রে বন্দি—যেখানে ভালো কিছু শুরু হলেই তা রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায়, তলিয়ে যায়। তাই প্রায়ই মনে হয়, এই দেশটা যেন কোনো স্বাভাবিক রাষ্ট্র নয়—বরং এক বারমুডা ট্রায়াংগেল, যেখানে সত্য, ন্যায়, মানবতা, সততা—সবকিছুই ক্রমে বিলীন হয়ে যায় অদৃশ্য অন্ধকারে।
তবু এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি। আত্মজাগরণের পথ কখনো বন্ধ হয় না। আমাদের প্রয়োজন সেই অন্তর আলোর জাগরণ—যেখানে ধর্ম মানে হবে সততা ও মানবিকতা, সেক্যুলারিজম মানে হবে সহনশীলতা, আর রাষ্ট্র মানে হবে ন্যায় ও দায়িত্বের সুষ্ঠু সমন্বয়। সেদিনই হয়তো আমরা বারমুডা ট্রায়াংগেল থেকে ফিরে আসতে পারব—একটি আলোকিত ও মানবিক বাংলাদেশের তীরে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:- গজনবী বিপ্লব
নেত্রকোণা অফিস:- গজনবী ভিলা, সাতবেরিকান্দা, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা