বিশেষ প্রতিনিধি: নুুরুল হুদা।
নেত্রকোনার গোমাই নদী এখন আর কেবল প্রকৃতির উপহার নয়—এখন তা এক শ্রেণির প্রভাবশালীর অর্থ উৎপাদনের খনি। যেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের কথা, সেখানে বাস্তবে চলছে পুরোপুরি উলটো দৃশ্য। মাত্র ৫৫০ টাকার রশিদে বালু বিক্রি হচ্ছে, আর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়ে যাচ্ছে সরকারের খাত থেকে—নীরবে, দিনের আলোয়।
বালু মহলের ইজারা নেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে, কিন্তু উত্তোলন চলছে নদী থেকে দূরে—কৃষিজমি, খাল-বিল এমনকি বসতভিটার পাশ থেকেও। রশিদে যে পরিমাণ এবং দামে দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে তা অনেক বেশি এবং নিয়ম বহির্ভূত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গোমাই নদীর আশেপাশের এলাকা থেকে শত শত বালুভর্তি গাড়ি রওনা দেয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রশিদে কাগজে কলমে দাম ৫৫০ টাকা, অথচ বাস্তব মূল্যের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।
প্রশ্ন উঠছে—এই অনিয়ম কি কেবল ইজারাদারদের একার কাজ, নাকি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে একটি অদৃশ্য জোট?
ঘটনার গভীরে পৌঁছাতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন একাধিক সাংবাদিক। কখনও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধা, কখনও আবার সরাসরি হুমকি—তথ্য প্রকাশ যেন কারও জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়।
জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে একবার একটি গাড়ি বালু জব্দ করা হলেও, সেটি ছিল ক্ষণিকের আলো। অভিযানের পরদিনই আবার সবকিছু চলেছে আগের মত।
নাগরিকদের প্রশ্ন—লোক দেখানো অভিযান দিয়ে কি থামানো যাবে সিন্ডিকেটের এই খেলা?
এই অনিয়মিত উত্তোলনের ফলে কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, নদীর গতি পথ পরিবর্তিত হচ্ছে, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে বালুতে। মাছ, কৃষি, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ—সবই আজ বিপদের মুখে।
গোমাই নদী আজ ঘুমিয়ে পড়েছে না, বরং তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের লাভের লোভে। এই অপব্যবস্থা থামাতে হলে চাই জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, সাহসী পদক্ষেপ, এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করার নিশ্চয়তা।
নইলে গোমাই নদী শুধু নামেই থাকবে—অভিযোগে, দুঃখে, আর লুটের ইতিহাসে।
সম্পাদক ও প্রকাশক:- গজনবী বিপ্লব
নেত্রকোণা অফিস:- গজনবী ভিলা, সাতবেরিকান্দা, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা