এক সময় মানুষের মুখে মুখে ঘুরতো “পিতার কাঁধে সন্তানের লাশই সবচেয়ে ভারী।” সেই কথার পেছনে ছিলো অশেষ বেদনার প্রতিচ্ছবি। পিতা-মাতা সন্তানদের আগলে রাখেন, তাদের বড় করে তোলেন, নিজের স্বপ্ন আর সাধনার ফল হিসেবে মনে করেন সন্তানদের। তাই সন্তানের অকালমৃত্যু যেন জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। কিন্তু আজ সময় পাল্টেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়ে এই কথার ব্যাখ্যাও যেন নতুনভাবে রচিত হচ্ছে। এখন কেউ কেউ বলেন—“পিতার কাঁধে সবচেয়ে ভারী বস্তু হলো কুলাঙ্গার সন্তান।”
এই কথাটি যতই তিক্ত শোনাক না কেন, বাস্তবতা হলো—এই সমাজে অনেক বাবা-মা আজ এমন সন্তানদের ভারে চূর্ণ। যে সন্তানকে মানুষ করেছেন নিজের ঘাম রক্ত দিয়ে, সে-ই সন্তান যখন নীতি-নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়ে যায়, অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, চরিত্রে কলঙ্ক লাগায়—তখন পিতার হৃদয় বিদীর্ণ হয়। তখন সেই সন্তান লাশ না হয়েও তার চেয়েও ভয়াবহ এক বোঝায় পরিণত হয়।
আজকের সমাজে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক পিতা-মাতার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে সন্তানদের অপকর্মের কারণে। কোনো পিতা হয়তো থানায় দৌড়াচ্ছেন ছেলের অপরাধ ঢাকতে, কোনো মা হয়তো রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাচ্ছেন মাদকে আসক্ত সন্তানের কান্নায়। কারো সন্তান ধর্ষণে অভিযুক্ত, কারো সন্তান চাঁদাবাজি বা খুনে জড়িত—আর এসব খবর পত্রিকার পাতায় ছাপা হলে সেই পিতামাতার জীবন যেন অভিশপ্ত হয়ে পড়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই কুলাঙ্গার সন্তানের জন্ম কোথায়? একদিনে কি তারা এমন হয়েছে? নাকি আমরা—অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ হয়েছি তাদের গড়ে তুলতে?
সন্তানকে শুধু ডিগ্রি, টাকা বা ভোগ-বিলাসের শিক্ষা দিলে সে মানুষ হবে না; তার ভিতরে যদি মানবিকতা, দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা না থাকে তাহলে সে একদিন সমাজের বোঝা, আর পিতার কাঁধের গ্লানিতে পরিণত হবেই।
এই ভয়ংকর বাস্তবতা আমাদের আবার নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে—আমরা সন্তানদের কী দিচ্ছি? শুধু মোবাইল, টাকা আর স্বাধীনতা? নাকি সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালো-মন্দের পার্থক্য আর একজন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা?
সমাজ ও পরিবারকে এখনই সজাগ হতে হবে। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ নয়, কুলাঙ্গার সন্তানের বোঝা যেন না পড়ে—এই চেতনা আমাদের প্রতিটি ঘরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সন্তান হোক গর্বের ধন, লজ্জার বোঝা নয়।
শাহ্ আলী তৌফিক রিপন
মানবাধিকার কর্মী