সম্প্রতি ময়মনসিংহের ভালুকায় ঘটে যওয়া ত্রিফল মার্ডাররে প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । কথার খোঁটা— আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আপন ভাবি ও তার দুই শিশু সন্তানকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে দেবর নজরুল ইসলাম ।
ঘটনার পর আত্ন গোপনে গেলেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ঘাতক এবং পুলিশি জিজ্ঞাসায় প্রাথমিক ভাবে হত্যার দায় স্বীকারও করেছেন অভিযোক্ত।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি বিভৎস ও মর্মান্তিক ঘটনা। এত বড় হত্যাকাণ্ডের পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র নয়, ছিল কেবল এক অসুস্থ মানসিকতার প্রতিফলন। জবানবন্দিতে নজরুল হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন ভাই ভাবির বাসায় থাকা খাওয়ার খোঁটা সহ্য করতে না পেরে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
জানা যায়, এর আগে নজরুল ইসলাম পূর্বে জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলায় জেল খেটেছেন প্রায় দুই বছর। সেই সময় তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম একটি সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তাকে জামিনে মুক্ত করেন। এরপর থেকে ভালুকায় রফিকুলের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতেন নজরুল।
ভাইয়ের সংসারে বিনা খরচে থাকা ও খাওয়া নিয়ে ভাবি ময়না আক্তার মাঝে মাঝে বিরূপ মন্তব্য করতেন। এতে ক্রমাগত ক্ষোভ জমতে থাকে নজরুলের মনে। গত ১৪ জুলাই ভোরে, সবাই যখন গভীর ঘুমে, তখন নজরুল ধারালো বঁটি দিয়ে ভাবি ও তার দুই সন্তান—রাইসা মনি (৭) এবং নিরব (২)-কে গলা কেটে হত্যা করে।
এরপর মরদেহগুলো বিছানায় ফেলে রেখে ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান সে। পরে সকালে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘরের তালা ভেঙে তিনজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত ময়না আক্তারের ভাই মো. জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরদিন বিকেলে জয়দেবপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে নজরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নজরুল ইসলাম নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা সলতু মিয়া ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন, মা-বাবাহীন হয়ে ছোটবেলায় তেলিগাতি এলাকার ফুফু রাসু বেগমের কাছে বেড়ে ওঠেন দুই ভাই। কৈশোরেই নজরুল বিভিন্ন বাসায় কাজ করতেন।
পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ভাসমান জীবনে জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও, নিজের মনের ভেতরে জমে থাকা হতাশা ও রাগ একসময় রূপ নেয় খুনি রুপে । নিহত দের জানাজা শেষে রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাবর গ্রামে তাদের দাফন করা হয় । । এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।