ছবি সংগৃহীতঃ
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নুসরাত সুলতানা এবং একাধিক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) সামনে স্থানীয় সাংবাদিক ও আজকের পত্রিকার কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে মারতে তেড়ে আসেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু।
আজ ১৯ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিসির কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিসি তাঁর চেয়ার থেকে উঠে বিএনপি নেতা বেবুকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।সাংবাদিক আরিফ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় সহকর্মী তামজিদ হাসান তুরাগসহ তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কক্ষে যান। সে সময় কক্ষে একাধিক এডিসি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল আজিজ নাহিদ উপস্থিত ছিলেন। এর কিছু সময় পর ডিসির কক্ষে বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বেবু প্রবেশ করেন।
আরিফ আরও বলেন, আমি তাঁকে বারবার বলেছি যে আমি ডিসির কাছে এসেছি। তাঁকে প্রশ্ন করছি। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? কিন্তু তিনি তাতে নিবৃত্ত হননি; বরং উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হচ্ছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় ডিসি, এডিসি এবং বৈষম্যবিরোধী নেতা নাহিদ বেবু সাহেবকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা তাঁকে অফিসের পাশের কনফারেন্স রুমে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দুজন এডিসি আমাকে নিয়ে ডিসির চেম্বার থেকে বের হয়ে তাঁদের কক্ষে নিয়ে যান। না হলে বেবু সাহেব আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেন।’
আরিফ বলেন, ‘এ ঘটনার দায় ডিসি নুসরাত সুলতানা এড়াতে পারেন না। কারণ, আমি যাওয়ার পর তিনি বিএনপি নেতা বেবু সাহেবকে ডেকে নিয়েছেন। তিনি বেবুকে ডেকে এনে আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছেন। পার্কের নামকরণের প্রস্তাবকারী বেবু ভাই। ডিসিকে করা প্রশ্নের উত্তর বারবার বেবু ভাই দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরিবেশটা এমন, যেন ডিসি বিএনপি নেতা বেবুর ছত্রচ্ছায়ার জেলা চালাচ্ছেন, সবকিছু করছেন।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বি এম কুদরত এ খুদা বলেন, ‘বেবু সাহেব কেন হঠাৎ রেগে গেলেন বুঝতে পারলাম না। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, ‘এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশাসনকে প্রশ্ন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডিসি কেন বেবু সাহেবকে ডেকে নিলেন এটা বোধগম্য নয়। ডিসির সামনেই সাংবাদিককে মারতে উদ্যত হওয়ার অর্থ কী বোঝায়? আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বিএনপি নেতার সাংবাদিককে পেটাতে উদ্যত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছে জানলাম। এ ব্যাপারে আমি খোঁজখবর নেব।
জানতে চাইলে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম। সাংবাদিক আরিফুল ডিসিকে প্রশ্ন করেছে, ডিসি তার জবাব দেবে। শফিকুল ইসলাম বেবু জেলা বিএনপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক, সে নিজেও একজন সাংবাদিক। অতিরঞ্জিত হয়ে, অতি উৎসাহী হয়ে সাংবাদিকের প্রতি সে যে আচরণ করেছে, তা ঠিক না। সে দলের পরিচয়ে আছে। কেন সাংবাদিকের ওপর উদ্যত হলো, দল তা দেখবে।
রংপুর বিভাগের কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসি অফিসে হট্টগোলের বিষয়ে খবর পাইনি। এ বিষয়ে কথা বলে খোঁজ নিচ্ছি। দেখি কী হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, শফিকুল ইসলাম বেবু জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি কুড়িগ্রামের রাজারহাট সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে আছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক:- গজনবী বিপ্লব
নেত্রকোণা অফিস:- গজনবী ভিলা, সাতবেরিকান্দা, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা